কলকাতা টিভি ডিজিটাল ডেস্ক: ছাত্রজীবনে কেউ সাধারণ মানের হতেই পারে৷ তার মানে এই নয় যে সে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না৷ একজন সাধারণ মানের পড়ুয়াও জীবনে বিরাট উচ্চতায় পৌঁছনোর ক্ষমতা রাখে৷ যদি সে নিজের ভিতর লুকিয়ে থাকা প্রতিভা খুঁজে বের করে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে সেই পথে হাঁটতে পারে, তাহলে তাঁর সাফল্য নিশ্চিত৷ বরুণ সিংয়ের (Group Captain Barun Singh) জীবনে সফলতার মন্ত্র এটাই৷ কুল্লুর চপার দুর্ঘটনার (IAF Chopper Crash) একমাত্র জীবিত আরোহী (Sole Surviver) সেই গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিং বর্তমানে বেঙ্গালুরুর বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন৷ এই ঘটনার তিন মাস আগে সেনা স্কুলের প্রিন্সিপালকে তিনি একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন৷ চিঠির সারমর্মই ছিল, ছাত্রজীবনে সাধারণ মানের হওয়াটা অপরাধ নয়৷
চিঠির পড়তে পড়তে নিজের জীবনের নানা ঘটনার কথা তুলে ধরেছিলেন বরুণ সিং৷ আসলে তিনি চেয়েছিলেন, স্কুল পড়ুয়ারা তাঁর জীবন কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের ভিতর লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভাকে খুঁজে বের লক্ষ্য স্থির করুক৷ মেধাবী ছাত্র হলেই যে জীবনে সফল হওয়া যায় এই ধারনাও পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন৷ চিঠিতে তাই লিখেছিলেন, It is ok to be mediocre ৷
বরুণ সিং লিখেছিলেন, পড়ুয়া হিসেবে খুব মেধাবী তিনি ছিলেন না৷ দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় টেনেটুনে ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করেছিলেন৷ খেলাধূলাতেও বিরাট পারদর্শী ছিলেন না৷ কিন্তু এরোপ্ল্যান বা অ্যাভিয়েশনের প্রতি তাঁর প্যাশন ছিল মারাত্মক৷ সেই প্যাশন থেকেই এনডিএ -তে যোগ দেন৷ ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দেওয়ার সেটাই ছিল প্রথম সিড়ি৷ তার পর ধাপে ধাপে তিনি তেজস এয়ারক্র্যাফ্ট স্কোয়ারড্রন হন৷ বরুণের কথায়, যেহেতু আমি পড়াশোনায় সাধারণ মানের ছিলাম তাই মাঝেমধ্যেই আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি হত৷ কিন্তু যখন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট থেকে ফ্লাইড স্কোয়াড্রন হলাম তখন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল৷ উপলব্ধি করলাম, আমি আরও ভালো করতে পারব৷ নিজেকে উজাড় করে দিতে পারলে অনেক কিছুই অর্জন করা সম্ভব৷ সেই বরুণই এ বছর অগস্টে সাহসিকতার জন্য শৌর্যচক্র পান৷
আরও পড়ুন: RIPGenRawat: ১৭ তোপধ্বনি-জওয়ানদের দৌড়, জেনারেলকে স্যালুট জানালো গোটা দেশ
১৮ সেপ্টেম্বরের চিঠিতে তিনি আরও লিখেছিলেন, সাধারণ মানের হওয়াটা অপরাধ নয়৷ সবাইকে স্কুলের পরীক্ষায় ৯০ পেতে হবে এমনটা নয়৷ তবে কেউ পেলে সে অবশ্যই বাহবার যোগ্য৷ কিন্তু না পেলে সে নিজেকে সাধারণ মনে করে যেন মন খারাপ না করে৷ স্কুলের পড়াশোনায় তুমি সাধারণ হতে পারো, কিন্তু সেটা তোমার বাকি জীবনের মাপকাঠি নয়৷ তোমার মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে বার করে আনো৷ সেটা সঙ্গীত, সাহিত্য, গ্রাফিক্স ডিজাইন বা জীবনের যে কোনও ক্ষেত্র হতে পারে৷ যে কাজটাই করো না কেন সেখানে নিজের সেরাটা দাও৷ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এটা ভেবো না আজ হয়তো আরেকটু ভালো করতে পারতাম৷ জীবনে কখনও আশাহত হও না৷ এটা ভাববে না যেটা করতে চাইছ সেটাতে ভালো পারফর্ম্যান্স করতে পারবে না৷ ছাত্রজীবনে আমিও সাধারণ ছিলাম৷ সেখান থেকে এই উচ্চতায় পৌঁছতে পেরেছি৷ ১২ ক্লাসের পরীক্ষার নম্বর তোমার ভবিষ্যত নির্ধারণ করে দেবে না৷ নিজের উপর আস্থা রাখো৷