জাতীয় স্তরে অন্যতম নয়, একমাত্র বিরোধী মুখ হয়ে উঠছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কাজটা কঠিন। খুবই কঠিন। কিন্তু মোটেই অসম্ভব নয়। হ্যাঁ, ভারতের অষ্টাদশ লোকসভায় পরিবর্তন সম্ভব। করোনা বিধ্বস্ত দেশের শাসকের হালহকিকত সুবিধার নয়। এই পরিস্থিতিতে ক্রমে অনিবার্য হয়ে উঠছে পরিবর্তন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি কেন্দ্রিক আগ্রহ সেই অনিবার্যতাকে আরও তীব্র করে তুলেছে। তাই এককভাবে তিন শতাধিক আসন পেয়ে দিল্লির তখতে দ্বিতীয় দফায় আসীন হয়েও আজ স্বস্তিতে নেই নরেন্দ্র মোদি, তাঁর দল বিজেপি বা তাঁদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট সরকার। বহুভাষা,জাত-পাত, আঞ্চলিক স্বাভিমান বিভাজিত একশো তিরিশ কোটির দেশ। সেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্রে মুখ্য ভূমিকা নেওয়া কোনও অঙ্গ রাজ্যের রাজনৈতিক প্রতিনিধির পক্ষে কাজটা সত্যি কঠিন। কিন্তু এই কোভিড কালে পেগাসাস উত্তরপর্বে যে ক্ষিপ্রতায় ভারতীয় রাজনীতির রং-রূপ বদলাচ্ছে, সেই ধারা অব্যাহত থাকলে তার অভিঘাত ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে পড়তে বাধ্য।
আরও পড়ুন: দিল্লি সফরে মমতার শরীরীভাষা সমীহ জাগাচ্ছে বিরোধীদের
না, এটা কোনও রাজনৈতিক জ্যোতিষচর্চা নয়। নয় কোনও মনোবাঞ্ছাপূরণ প্রসূত ভাবনা।সর্বভারতীয় রাজনীতির ক্ষমতা বিন্যাসের ইতিহাসে চোখ রাখলেই মালুম পাওয়া যাবে, কেন দেশে ডজন ডজন নেতা নেত্রী থাকতে মমতাই আপাত অসম্ভবকে(এক্ষেত্রে বিজেপির বিকল্প সংসদে শক্তিধর হয়ে ওঠা) সম্ভব করে তোলার প্রশ্নে সেরা বাজি। বিজেপির পরাক্রম রুখতে বিরোধী শক্তিগুলোকে এক ছাতার তলায় আনার কাজে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীই সেরা বাছাই।
প্রথমে ফিরে যাই, কাজটা কঠিন কেন, সেই প্রসঙ্গে। ছোট -বড়-মাঝারি মিলিয়ে মত ২৮ টি অঙ্গরাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জোড়া দেশে ঐক্যের প্রশ্নে একটা শক্তিশালী কেন্দ্রকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ধারণা। সেখানে আঞ্চলিক দলের পক্ষে জাতীয় স্তরের নেতৃত্বে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠা মোটেই সহজ নয়। ঐতিহাসিক ঘটনা পরম্পরায় স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরমুহূর্তে শক্তিশালী কেন্দ্র আর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস বস্তুত এক বিন্দুতে মিলে গিয়েছিল। জরুরি অবস্থার অবসানে ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধী তথা কংগ্রেস সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে সেই ট্র্যাডিশন ভাঙনের সূচনা হয়েছিল।
ভারতীয় ঘরোয়া রাজনৈতিক পরিসরে জরুরি অবস্থার গর্ভে বিজেপির যাত্রা পথের সমান্তরালে দেশের আঞ্চলিক দলগুলির জন্ম ও তাদের কর্মকান্ড ওই পর্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা অস্বীকার করার উপায় নেই। বাজপেয়ীর এনডিএ কিংবা নরসিংহ রাওয়ের জমানায় সর্বভারতীয় দুই শক্তিকে আঞ্চলিক দলকে নিয়ে চলতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন: নিতিনের কাছে কলকাতার জন্য আরও উড়ালপুল চাইলেন মমতা
ইন্দিরা অসূয়া থেকে কংগ্রেসে ভাঙন। মোরারজি দেশাই থেকে চন্দ্রশেখর, বিশ্বনাথপ্রতাপ সিং, হরদান হাল্লি ডড্ডেগৌড়া দেবেগৌড়া, চৌধুরী চরণ সিং, ইন্দ্র কুমার গুজরাল এঁরা দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও কেউ মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। এ ছাড়াও এঁদের অভিন্নতা রয়েছে, এঁরা সবাই কংগ্রেস ঘরানার। রামমনোহর লোহিয়া বা আচার্য নরেন্দ্র দেবের মতো সমাজগণতন্ত্র অনুসারী, কিংবা প্রথম জীবনের কমিউনিস্ট পার্টির অনুগত হলেও ওঁদের সবার সংসদীয় রাজনীতিতে উত্থান ও সর্বভারতীয় মঞ্চে পরিচিতি জাতীয় কংগ্রেসের হাত ধরে। এক কথায় কংগ্রেস পরিবারভুক্ত। ইন্দিরা জমানায় দলের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বিন্যাসের টানাপোড়েনে কংগ্রেস ত্যাগ করে জনতা দল ইত্যাদির সঙ্গে জড়িয়েছেন তাঁরা।
এঁদের উত্তরসূরিরা পরবর্তীতে কংগ্রেস বিরোধী শক্তি হিসেবে আঞ্চলিক ও জাতপাত ভিত্তিক হরেক দলের সমাবেশ ঘটিয়েছিল। লোহিয়া ভক্ত লালুপ্রসাদ যাদব, মুলায়ম সিং যাদব, নীতীশ কুমারের উত্থান গোবলয়ে পিছড়ে বর্গ কেন্দ্রিক আন্দোলনের গর্ভে। তেমনই অন্ধ্রপ্রদেশে নন্দমুরি তারক রামরাও (এন টি আর), চন্দ্রবাবু নাইডু, এম জি রামচন্দ্রনের (এম জি আর) অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড় মুনেত্রম (এ আই এ ডি এম কে) বা হালের তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রশেখর রাও থেকে ওড়িশার বিজু জনতা দলের নবীন পট্টনায়ক, ঝাড়খণ্ডের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার শিবু সোরেন এঁরা সবাই আঞ্চলিক জনগোষ্ঠীর ভাষা, জাতি ও সাংস্কৃতিক অস্মিতানির্ভর রাজনীতি করেছেন। বিশেষত, মণ্ডল কমিশন কালে পরিচিতি নির্ভর রাজনীতি বাড়তি জল হওয়া পেয়েছিল। কিন্তু সবাই কংগ্রেস ঘরানার বাইরে। নেহরু-ইন্দিরা লিগাসিহীন বরং এঁদের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতার মূল উপজীব্য কট্টর কংগ্রেস বিরোধিতা। অবশ্য এঁদের উত্থানপর্বে কেন্দ্র ও কংগ্রেস প্রায় সমার্থক ছিল। এমজিআরের উত্তরসূরি জয়ললিতা থেকে করুণানিধি ও তাঁর পুত্র এম কে স্তালিন, পরস্পরের বিরোধী হলেও তামিল স্বাভিমান তাঁদের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। অসমেও অসম গণ পরিষদ, আল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু), মিজোরামের লালডাঙা প্রতিষ্ঠিত মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট সবার দলের নামকরণেই স্পষ্ট তাদের আঞ্চলিক পরিচিতি সত্তার প্রাধান্য। লক্ষণীয় এঁরাও কংগ্রেস ছোঁয়াচ মুক্ত। অর্থাৎ অঙ্গরাজ্যে কংগ্রেস মুক্ত সরকার গঠনের আত্মবিশ্বাস (কেরলে বাম সরকার ব্যতিরেকে) পোক্ত হয়েছিল এইসব আঞ্চলিক দলের দৌলতে। যাদের সৌজন্যে অস্থায়ী হলেও দেশে কংগ্রেস ছাড়া যে সরকার গঠন সম্ভব, ভারতের সংসদীয় রাজনীতিতে তার নজির তৈরি হয়েছিল।
ক্ষমতায় ফিরে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস এর লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে সারকারিয়া কমিশন বসিয়েও নানাস্তরীয় প্রাদেশিক বৈষম্য ও বঞ্চনাকে অস্ত্র করে আঞ্চলিক দলের রমরমায় বাঁধ দিতে পারেনি কংগ্রেস। কেরল ,ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ কিছুটা ভিন্ন। সেখানে আঞ্চলিক পরিচিতি ভিত্তিক রাজনীতি সুবিধা করতে পারেনি, কমিউনিস্টদের শ্রেণি রাজনীতির আধিপত্যের কারণে। যাক সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।
আরও পড়ুন: ঘরে-বাইরে চ্যালেঞ্জের মুখে মোদি মিথ, ভাঙছে দলের অনুশাসন
যে কারণে এতটা শিবের গীত গাইতে হল, সেটা হল আটের দশকের এনটিআর, এমজিআর থেকে শুরু করে হাল আমলের অন্ধ্রপ্রদেশের জগন মোহন রেড্ডি, চন্দ্রশেখর রাও, ওড়িশার নবীন পট্টনায়ক, আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিবাল, শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে, কিংবা পঞ্জাবের আকালি দলের প্রকাশ সিং বদলের মতো বর্তমান ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, নিজ নিজ রাজ্যে জনপ্রিয় হলেও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে মুখ হয়ে ওঠার চেষ্টা করেননি। এমনকি লালুপ্রসাদ, মুলায়ম কিংবা নীতীশ কেন্দ্রে ও কংগ্রেস বা এনডিএ মন্ত্রিসভার ডাকসাইটে সদস্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। কেন্দ্রে কে ক্ষমতায় বসবেন বা জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করে অকংগ্রেসি সরকার টিকিয়ে রাখার কৌশল নির্মাণে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নিলেও নিজেরা (সুপ্ত বাসনা সত্ত্বেও) দিল্লির কুরশি দখলে আদাজল খেয়ে নামেননি। হতে পারে, সর্বভারতীয় রাজনৈতিক পরিসরে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তাঁরা সজাগ ছিলেন।
এই মুহূর্তে গোটা দেশে এমন কেউ কি আছেন, যিনি আসমুদ্র হিমাচলে বিজেপি বিরোধী মুখ হতে পারেন ? পারেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শরদ পাওয়ার বয়সের ভারে কিছুটা অশক্ত। নিজের রাজ্য মহারাষ্ট্রে কিছুটা মাথা মুড়িয়ে শিবসেনা ও কংগ্রেসের হাত ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। হাওয়ায় ভাসছে, শরদ রাইসিনা হিলস অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি পদের স্বপ্ন দেখছেন।
আরও পড়ুন: জাভেদ আখতারকে ‘খেলা হবে’ স্লোগান নিয়ে গান লেখার অনুরোধ মমতার
প্রধানমন্ত্রী মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ গোটা কেন্দ্রের শাসক দল ও সরকারকে রীতিমতো ঘোল খাইয়ে তৃতীয়বারের জন্য বাংলার মসনদে বসেছেন মমতা। বাংলায় সীমাবদ্ধ তৃণমূল। কিন্তু মমতার এই হ্যাট্রিকের পর বাংলায় তো বটেই, দেশময় তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। মুখ্যত জাতিসত্তা নির্ভর রাজনীতিতে আস্থাশীল দক্ষিণীরাও ‘দিদি’ র সাফল্যে উচ্ছ্বসিত। খোদ তামিলনাড়ুর রাস্তায় জোড়া ফুল প্রতীক-সহ মমতার ছবি দিয়ে তামিল ভাষায় হোর্ডিং দেখা গিয়েছে। বাংলার পাশাপাশি কেরলেও সিপিএম নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এলডিএফ) একটানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় বসে সে রাজ্যে নজির গড়েছেন। তবুও সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য পিনরাই বিজয়ন আপাতত আঞ্চলিক সাফল্যেই তুষ্ট। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে কট্টর বিজেপি বিরোধী অবস্থান হলেও কমিউনিস্ট বিজয়নের ব্যক্তিগত কোনো এজেন্ডা নেই, সবটাই দল নির্ভর। নবীন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সফল। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বা মোদি-শাহের সঙ্গে বিরোধ এড়িয়ে চললেও নিজের রাজ্যে বিজেপিকে জমি ছাড়েননি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর উপর্যুপরি সাফল্য রয়েছে নবীনের ঝুলিতে। কিন্তু কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা ধক কোনোটাই তাঁর আছে বলে মনে হয় না। একই কথা অরবিন্দ কেজরিবাল, স্তালিন, অখিলেশদের ক্ষেত্রেও সত্য।
তা হলে হাতে রইলেন মমতা। একমাত্র ব্যতিক্রমী চরিত্র। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেছেন। কংগ্রেসের রাজনৈতিক ভাবাদর্শের সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান। নতুন দল গড়ে বিজেপি নেতৃত্বধীন এনডিএ সরকারের শরিক হলেও তাঁর দলের সংবিধান আগাগোড়া জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিলিপি মাত্র। আদ্যোপান্ত বাংলা কেন্দ্রিক দল হলেও তৃণমূল কখনই আঞ্চলিক বা প্রদেশিকতার গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়নি। এক নেত্রীভিত্তিক দল, রাজনীতির অভিমুখ প্রধানত বাংলা হলেও কংগ্রেস ঘরানায় পুষ্ট মমতা দিল্লির সঙ্গে তাঁর যোগসূত্র এক মুহূর্তের জন্য ছিন্ন করেননি। তৃণমূল নেত্রীর এই বৈশিষ্ট্যই অন্যদের থেকে তাঁকে আলাদা করে দিয়েছে। নরসিমা রাও থেকে বাজপেয়ী, মনমোহন সিং- তিন দফায় রেল, কয়লা, যুব কল্যাণ ও ক্রীড়ার মতো দফতর সামলেছেন। সংসদে তৃণমূলের একমাত্র সদস্য হয়েও নিজেকে দিল্লির রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রাসঙ্গিক করে রাখার অধ্যবসায়ে তাঁর খামতি ছিল না। মমতার প্রথম সংসদে পদার্পণ সোমনাথ চট্টপাধ্যায়ের মতো ওজনদার সিপিএম নেতাকে হারিয়ে। সেই বিজয়েই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নজরে পড়েছিলেন মমতা। শুধু কংগ্রেস হাইকমান্ড কেন, বাংলার বন্ধ কারখানা খোলার দাবিতে দিল্লিতে মন্ত্রিসভায় তাঁর সতীর্থের ঘরের বাইরে ধরনা কিংবা টাডা আইন রুখতে কলকাতায় অবস্থান, গোটা দেশই মমতার আপোসহীন মেজাজের পরিচয় পেয়েছিল। নিজেকে ভেঙেছেন গড়েছেন, কিন্তু জাতীয় রাজনীতির মূল স্রোত থেকে এক মুহূর্তের জন্য বিচ্ছিন্ন হননি। রাজ্যের অভ্যন্তরীন বিষয় হলেও সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনকেও সর্বভারতীয় মঞ্চে হাজির করেছিলেন তিনি।
রাজ্য রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় কংগ্রেস ভাঙলেও পরবর্তীকালে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তাঁর সখ্য আরও নিবিড় হয়েছে। বাজপেয়ী এই প্রাক্তন কংগ্রেসিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতেন। তাঁকে রেলমন্ত্রকের গুরুদায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি। সোনিয়া -মমতা সম্পর্কের জেরে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শরিক মমতা ফের রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন। বাংলায় সাড়ে তিন দশকের বাম জমানার অবসানেও সোনিয়ার দল মমতার পাশে দাঁড়িয়েছিল। সব মিলিয়ে তাঁর দলকে ঘিরে হাজারও বিতর্ক-বিসম্বাদ, তবুও রাজ্যে যেমন মমতার জনপ্রিয়তায় দাগ ফেলা যায়নি, তেমনই তাতে ভর দিয়ে জাতীয় স্তরেও কালীঘাট কন্যার গুরুত্ব সর্বদাই কমবেশি ঊর্ধমুখী। তাঁকে অপছন্দ করলেও উপেক্ষা করার উপায় নেই। সদ্য হয়ে যাওয়া রাজ্য বিধানসভা ভোটের প্রচারে দেশের প্রধানমন্ত্রী মোদি যেভাবে তাঁর জনসভার ঝড় বইয়ে দিয়েছেন তার নজির ভূ-ভারতে নেই। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই রাজ্যে মমতাকে আক্রমণ শানাতে যত সংখ্যক জনসভা করেছেন,দেশের অন্য কোনও অবিজেপি শাসিত রাজ্যে তা তাঁরা করেননি। রাজ্যে কে ক্ষমতায় বসবে, লড়াই তা নিয়ে হলেও আদতে মোদি বনাম মমতার সম্মুখসমরে পর্যবসিত হয়েছিল ২০২১ এর বিধানসভা ভোট। অর্থাৎ,২০২৪ সালে অষ্টাদশ লোকসভায় ক্ষমতা দখলের পথে তাঁর যে প্রধান প্রতিপক্ষ হতে চলেছেন মমতা তা মোদি এই ২০২১ সালেই বিলক্ষণ টের পেয়ে গিয়েছিলেন। কেননা সর্বভারতীয় শক্তি হিসেবে রাহুল গান্ধীর যুগে কংগ্রেসের ধারাবাহিক অবক্ষয় অব্যাহত। এবং আঞ্চলিক দলগুলির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অনীহা ও পারস্পরিক কোন্দল (উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম-অখিলেশের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির বিরোধ) নিয়ে ব্যস্ততা মোদির সাফল্যের অন্যতম রসায়ন। বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রে সেটা প্রত্যাশিত। কিন্তু মোদি-মমতা দ্বৈরথ শেষ পর্যন্ত দিল্লি পাড়ি দিতেই সব হিসেব পাল্টে যেতে বসেছে।