কলকাতা: চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের (SLST Job Seekers Protest) ১০০০ দিনে গান্ধী মূর্তির কাছে ধরনা স্থলে দখল দিল রাজনৈতিক দলগুলিষ। শনিবার এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন ১০০০ দিনে পড়ল। এদিন ধরনা মঞ্চে আসেন কংগ্রেস, বিজেপি, বামফ্রণ্ট এবং তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা। তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ধরনামঞ্চে আসতেই আন্দোলনকারী একাংশ চোর চোর বলে স্লোগান তোলে। মঞ্চে তখন তুমুল বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। কুণাল বলেন, যে আন্দোলনকারীরা আমরা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে এক মহিলা আজ মাথা মুড়িয়েছেন। সেই কারণেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। কারও কথা ওমি ধরনা মঞ্চে আসেনি।
এদিন সকাল থেকেই মেয়ো রোডে এসএসএসটি চাকরিপ্রার্থীদের ধরনামঞ্চ ছিল জমজমাট। নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড, পোস্টার লাগানো ছিল গান্ধীমূর্তির আশপাশে। বিক্ষোভকারীদের গলায় ঝুলছিল চাকরি চাই লেখা প্ল্যাকার্ড। জনা দুয়েক মহিলা চাকরির দাবিকে সামনে রেখে ধরনামঞ্চেই মাথা মুড়িয়ে ফেলেন। অনেক পুরুষ বিক্ষোভকারীও মাথা ন্যাড়া করেন। তাঁরা খালি গায়ে বিক্ষোভ দেখান। কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, কৌস্তভ বাগচী সহ অনেকেই মঞ্চে হাজির হন। আশুতোষ সংহতি জানাতে নিজের গায়ের জামা খুলে ফেলেন। তার কিছুক্ষণ পরেই মঞ্চে হাজির হন রুদ্রনীল ঘোষের নেতৃত্বে বিজেপি প্রতিনিধিরা। ততক্ষণে ধর্মতলায় লেনিনের মূর্তি থেকে মিছিল শুরু হয় রাজ্য বামফ্রন্টের। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ছাড়াও সব শরিকের শীর্ষ নেতারা মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন। সেই মিছিল পৌঁছয় ধরনাস্থলে। মঞ্চে বিজেপি নেতারা থাকায় বিমান এবং অন্য বাম নেতারা কাছে যাননি।
আরও পড়ুন: এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান হাজার দিনে পড়ল
গান্ধীমূর্তির পাদদেশ তখন ভিড়ে ভিড়াক্কার। তার মধ্যেই কিছু দলীয় সমর্থক নিয়ে ধরনামঞ্চে আসেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল। তিনি আসতেই বিক্ষোভকারীদের একাংশ চোর চোর বলে স্লোগান তোলেন। কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা কৌস্তভ বাগচী বলেন, সরকারি প্রতিনিধি কোথায়। উনি তো দলের নেতা।
কুণাল ধরনামঞ্চেই বসে পড়েন। তিনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকেই তৃণমূল নেতা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে কুণাল জানান, আন্দোলনকারীদের কয়েকজন প্রতিনিধি ১১ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। আন্দোলনকারীদের সমস্ত কাগজপত্র, দাবিদাওয়া প্রস্তুত রাখার পরামর্শ দেন তিনি। আন্দোলনকারীরা কুণালের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কুণাল ঘোষ এসেছেন। আমাদের আশা, আগামিদিনে শাসকদলের আরও নেতা, মন্ত্রী এই মঞ্চে আসবেন। আন্দোলনকারীদের এক নেতা বলেন, আমরা যাতে জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলের চাকরিতে যোগ দিতে পারি, সরকারকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
এর আগেও কুণালের উদ্যোগে এই চাকরিপ্রার্থীরা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর অফিসে দেখা করেন। কিন্তু তার পরেও অনেক মাস কেটে গিয়েছে। কাজ কিছু হয়নি। ২০১৯ সালে এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীরা প্রথম অবস্থান আন্দোলন শুরু করেন ময়দান চত্বরে কলকাতা প্রেস ক্লাব চত্বরে। তা চলে ২৯ দিন। সেই সময়কার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে আচমকাই অবস্থানস্থলে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দাবিদাওয়া পূরণের আশ্বাস দিলে অবস্থান তুলে নেওয়া হয়।
এদিকে কুণালের প্রস্তাব নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে দ্বিমত দেখা দেয়। একদল বলছে, এর আগে বহুবার নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। তবু কাজের কাজ হয়নি। বরং শাসকদলের নেতারা আমাদের আন্দোলনকে কটাক্ষ করেন। প্রসঙ্গত. এদিনও প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এই আন্দোলনকে নাটক বলে ব্যঙ্গ করেন।
আরও অন্য খবর দেখুন