নয়াদিল্লি: জানুয়ারির শেষ সপ্তাহেই লোকসভা ভোটের পারদ হু-হু করে চড়ে গেল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক ঘোষণায়। বঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোটে নেই, একাই লড়বে— জননেত্রীর এই ঘোষণার সঙ্গেই জোটের কফিনে একটি পেরেক বসে গেল।
শুধু একলা চলোর ঘোষণাই নয়, মমতা বুধবার পরিষ্কার জানিয়ে দেন, রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায়যাত্রায় জোট শরিক হিসেবে সঙ্গী হবে না তাঁর দল। কারণ, ‘সৌজন্য’ দেখিয়ে কংগ্রেস তাঁদের আমন্ত্রণ জানায়নি বলে তাঁর দাবি। যদিও ভারত জোড়ো ন্যায়যাত্রা বিহারে ঢুকলে, সেখানে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একমঞ্চে বসতে চলেছেন সংযুক্ত জনতা দল প্রধান তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
আরও পড়ুন: শাহের পুতুল অসমের মুখ্যমন্ত্রী, মামলায় ভয় পাই না, চ্যালেঞ্জ রাহুলের
একদিকে রাহুল গান্ধী অসমে তাঁর যাত্রা এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। আগামিকাল, বৃহস্পতিবার কোচবিহার হয়ে তাঁর বাংলায় ঢোকার কথা। সেখান থেকে শিলিগুড়ি হয়ে ২৯ জানুয়ারি বিহারে প্রবেশ করবেন রাহুল গান্ধী। চারদিনের বিহার সফরে পূর্ণিয়ায় এক নির্বাচনী জনসভায় যৌথ ভাষণ দেবেন রাহুল-নীতীশ। যদিও আরজেডি নেতা তথা উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্ব যাদব সেই সভায় উপস্থিত নাও থাকতে পারেন। কারণ, ওইদিন তাঁকে ইডি তলব করেছে। জোটের আর এক শরিক কমিউনিস্ট পার্টি লিবারেশন সভায় থাকবে বলে জানিয়েছে। উল্লেখ্য, ইন্ডিয়া জোট গঠনের পর এই প্রথম এক মঞ্চে দেখা যাবে রাহুল-নীতীশকে।
ভোটের রাজনৈতিক উত্তাপ চড়ার আগুনে আগামিকালই ঘি ঢালতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২৫ জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর থেকে ভোটের প্রচার শুরু করতে চলেছেন তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদি। অযোধ্যায় রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার পরপরই লোকসভা ভোটের কুরুক্ষেত্রে নামতে চলেছেন মোদি।
সব মিলিয়ে ধীরে ধীরে লোকসভা ভোটের তাওয়া গরম হতে শুরু করার মধ্যেই সাধারণতন্ত্র দিবসের আগে জননায়ক কর্পূরী ঠাকুরকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার কথা ঘোষণা করে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন মোদি। বিহারের নীতীশ-লালু-কংগ্রেসের মহাগাঁটবন্ধনের ছুঁচো গেলার মতো দশা হয়েছে। কারণ, সাবেক জনতা দলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজতন্ত্রী নেতা কর্পূরী ঠাকুর হলেন নীতীশ-লালুদের রাজনৈতিক গুরু। সে কারণে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে প্রশংসা করলেও তাঁরা বুঝতে পারছেন পিছড়েবর্গ ভোটে থাবা মেরে দিয়েছেন মোদি।
রাহুল গান্ধী পর্যন্ত সিদ্ধান্তকে প্রশংসা করলেও রাজনৈতিক বলে ব্যাখ্যা করেছেন। এদিন দেশজুড়ে জাতিভিত্তিক জনগণনার দাবি তুললেও কর্পূরী ঠাকুরকে ভারতরত্নে ভূষিত করাকে স্বাগত জানিয়েছে। রাহুল বলেন, প্রতীকী রাজনীতি নয়, দেশের প্রয়োজন বাস্তব ন্যায়বিচার। কর্পূরী ঠাকুরজিকে আমি সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই। সত্যিই তিনি দেশের একজন রত্ন। তাঁকে ভারতরত্ন দেওয়াকে স্বাগত জানাই, বলেন রাহুল।
খনার বচনে রয়েছে, ‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পুণ্য দেশ’। কিন্তু, দেখা যাচ্ছে যে, মাঘের শুরুতেই গর্জন শুরু হয়ে গিয়েছে ভারতের রাজনীতির আকাশে। একদিকে বিজেপি ও গেরুয়া সংগঠনগুলি, অন্যদিকে নড়বড়ে ইন্ডিয়া জোটের আঙুল তোলা হুঁশিয়ারি। যা এখন গলার কাঁটার মতো আটকে আছে আসন সমঝোতা নিয়ে। যার প্রথম ধাপেই নিজেকে গুটিয়ে নিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
অন্য খবর দেখুন