Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: আহা গণতন্ত্র, বাহা গণতন্ত্র

চতুর্থ স্তম্ভ: আহা গণতন্ত্র, বাহা গণতন্ত্র

Follow Us :

আমরা ভোট দিই কেন? সরকার তৈরি করতে? এটাই চলতি ধারণা। কিন্তু একটু খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে আমরা শুধু সরকারই তৈরি করি না, বিরোধীপক্ষও তৈরি হয় আমাদেরই ভোটে, কখনও শক্ত সবল বিরোধী, কখনও দুর্বল বিরোধী। আসলে আমরা একটা সংসদীয় ব্যবস্থা চালানোর জন্য ভোট দিই, যে সংসদে বসে সাংসদরা আমাদের জন্য মানুষের জন্য আইন তৈরি করবেন। সেই আইন ব্যক্তি মানুষ থেকে সমষ্টি, সংখ্যালঘু থেকে সংখ্যাগুরু, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক প্রত্যেক মানুষের জীবনযাত্রা পেশা ইত্যাদির মান আরও উন্নত করবে। সেই আইন দেশের সম্পদ বিতরণে এক ভারসাম্য আনবে। সেই আইন দেশের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখবে, দেশের বাইরে প্রতিবেশী আর অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে, আইনের শাসন বজায় রাখবে। আর এই কাজ কেবল সরকার করবেন না, সরকার আর বিরোধী, যারা আমাদেরই ভোটে নির্বাচিত, তারা সবাই মিলেই করবেন। কারণ আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্র বলে, সরকার বা বিরোধী দুই পক্ষই আসলে দেশের জন্যই কাজ করে, বিরোধী পক্ষ সরকারের বিরোধিতা করে, তারা সরকার বিরোধী হতেই পারে, দেশ বিরোধী নয়। এবার আমাদের দেশের সংসদের দুটো ভাগ আছে, লোকসভা, যার সদস্যদের আমরা সরাসরি নির্বাচন করি। রাজ্যসভা, যার সদস্যদের নির্বাচিত করেন আমাদের নির্বাচিত বিধায়করা। এরফলে প্রত্যেক রাজ্যের প্রতিনিধি সংসদে থাকে, তাঁরা দেশের বাজেট ব্যয় বরাদ্দ থেকে দেশের আইন কানুন পাশ করেন, এবং সেই আইন পাশ করার জন্য যে সংসদ তা চালাতে বিরাট খরচ, প্রতি মিনিটে আড়াই লক্ষ টাকা। না এর মধ্যে সংসদের সুরক্ষা, ভবন মেরামতি বা সংসদ চালানোর জন্য সরকারি কর্মচারিদের মাইনে ইত্যাদি ধরা নেই, ধরা নেই সংসদের বিভিন্ন কমিটির খরচ, তাঁদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাবার, থাকার, খাবার খরচ। সে সব ধরলে দেশের সংসদীয় গণতন্ত্র বাঁচিয়ে রাখার খরচ কম নয়।

এবার আসুন দেখা যাক, সংসদ চলে কি ভাবে? সংসদে সরকার বিল আনে, মানে ধরুন স্কুলে মিড ডে মিল নিয়ে একটা বিল আনা হল, বলা হল, সমস্ত সরকার অনুমোদিত স্কুলে যে পরিমাণ খাবার দেওয়া হয়, তার পরিমাণ ২৫ টাকা করে বাড়ানো হল, এবং বেসরকারি স্কুলগুলোকেও এই পরিমাণ খাবার দিতে হবে। তো নিয়ম হল, সরকার পক্ষের একজন, তিনি শিক্ষামন্ত্রী হতেই পারেন, তিনি বিলটিকে সংসদের লোকসভায় বা রাজ্যসভায় পেশ করবেন। এরপর সেই বিলটা পড়া হবে, অর্থাৎ বুঝিয়ে বলা হবে যে এর ফলে কত টাকা খরচ আসবে, তার জন্য ব্যয় বরাদ্দ কত? ইত্যাদি। এরপর আলোচনা শুরু হবে, সরকার পক্ষ তাদের কথা বলবে, বিরোধীপক্ষ তাদের কথা বলবে, এইখানে এসে এমনও হতেই পারে যে বিরোধীপক্ষ বলল, বিলটা জরুরি কিন্তু আরও ডিটেল আলোচনা দরকার, আরও মতামত দরকার, এটাকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক, সরকার রাজি হলে এই বিল সেই কমিটিতে যাবে, সেখানে সরকার পক্ষের কিছু সাংসদ, বিরোধীপক্ষের কিছু সাংসদ, দফতরের অফিসার ইত্যাদি মিলে আলোচনা হবার পর, আবার সংসদে পেশ করা হবে। আবার আলোচনা হবে, তারপর প্রয়োজনে ভোটাভুটি হবার পর বিলটা আবার চলে যাবে লোকসভায়। সেখানে আবার আলোচনা হবে, প্রয়োজনে আবার ভোটাভুটি হবে এবং পাশ হলে এবার তা রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। তিনি সই করার পর এটা আইন হবে। কিন্তু বহু সময়ে দেশে ঘটতে থাকা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সরব হন বিরোধীরা, তাঁরা আগে সেই বিষয়ের ওপর আলোচনা চান, আলোচনা না করতে দিলে তাঁরা সংসদের ওয়েলে নেমে পড়েন, শ্লোগান দিতে থাকেন। আর এইসব হট্টগোলের মধ্যে স্থগিত রাখতে হয় অধিবেশন। যে যখন বিরোধী আসনে বসেন, সেই তখন এইভাবে অধিবেশনের কাজ থামিয়ে জরুরি বিষয় উত্থাপন করতে চান, এটা নতুন কিছু নয়। আর এটাও নতুন নয় যে সরকার পক্ষের লোকজন, এই অধিবেশন আটকানোকে গণতন্ত্রের লজ্জা ইত্যাদি বলবেন, সংসদের প্রতিটা অধিবেশনে আজ থেকে নয়, সেই কোন কাল থেকে এ জিনিস চলে আসছে। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় স্পিকার থাকাকালীন বলেছিলেন, ইয়ে সার্কাস বন্ধ করো, এবার ভেঙ্কাইয়া নাইডু তো কেঁদেই ফেললেন। হিসেব কী বলছে? ২০১৩ – ১৪ তে সংসদে আজ যাঁরা বিরোধী, তাঁরা ছিলেন সরকারে, আজ যাঁরা সরকারে, তাঁরা ছিলেন বিরোধী।

কী হয়েছিল? রাজ্যসভায় শীতকালীন অধিবেশনে ৭২.৭ ঘন্টা কাজ থমকে গিয়েছিল, বিরোধীদের প্রতিবাদে, কাজ হয়েছিল ৩২.৮ ঘন্টা। লোকসভায় ওই শীতকালীন অধিবেশনে কাজ হয়েছিল, ১৯.৭ ঘন্টা, আর কাজ থেমে থেকেছিল  ৯০.৩ ঘন্টা। মূলত বিজেপি এবং সহযোগী দলগুলোর কারণেই, অধিবেশন স্থগিত রাখতে হয়েছিল বহুবার, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলিরা বলেছিলেন, সংসদের কাজ বন্ধ করাটাও একধরণের গণতন্ত্র। আর আজ? সেই দলের নেতা সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কাঁদছেন, দলের নেতা নরেন্দ্র মোদী বলছেন বিরোধীরা উন্নয়ন বিরোধী, তারা মানুষের নির্বাচিত সরকারকে কাজ করতে দেয় না। অথচ এই বারে বাদল অধিবেশনের হিসেব কী বলছে? লোকসভায় বিরোধীদের বাধা দেওয়ার ফলে ৭৪.৪৬ ঘন্টা কাজ থমকে গিয়েছিল। তার মানে? মানে এটা পরিস্কার যে এই বাধা দেওয়ার ব্যাপারে বিজেপি বা এনডিএ একটু হলেও এগিয়ে ছিল, এবং এটা নতুন কিছু নয়। তাহলে নতুনটা কী? নতুন হল সংসদকে পাত্তাও না দেওয়া, সংসদকে এড়িয়েই মোদি সরকার কাজ চালাতে চায়। এটা ২০১৪ থেকে খুব পরিস্কার, ওই যে আগে বললাম কোনও বিল নিয়ে মতান্তর হলে বিরোধীরা আরও আলোচনার জন্য, সেটাকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠাতে বলে। কারণ বিল তো তৈরি করেছে সরকার পক্ষ আর আমলারা, বিরোধীরা সেটা খতিয়ে দেখতে চায়। ১৪ এবং ১৫ তম সংসদ, মানে ইউপিএ এক ও দুই সরকারের সময় গড়ে ৭১ টা বিল পাঠানো হত সিলেক্ট কমিটিতে, সেখান থেকে সংশোধিত হয়ে আসা বিল পেশ করা হত, ১৬ এবং ১৭তম সংসদ মানে মোদি এক আর মোদি দুই সরকারের সময়, সেই সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো নেমে এসে ২৭% আর ১২%  তে দাঁড়িয়েছে। মানে বিরোধীদের কথা শোনার প্রবণতাটুকুও, এই সরকারের নেই।

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিল আনা এবং পাশ করানো, একটা বিল আনা হবে সংসদের দুই কক্ষে আলোচনা হবে, প্রয়োজনে সংশোধন হবে, তারপর পাশ হবে, সময় তো লাগবেই। সেই হিসেব ধরে একই অধিবেশনে, মানে ধরুন সংসদের বাদল অধিবেশন বা শীতকালীন অধিবেশন, কমবেশি এক থেকে দেড়মাস চলে, কাজেই একই অধিবেশনে বিল এনে তা পাশ করানো সম্ভব হয় না। কিন্তু হিসেব বলছে ইউপিএ ওয়ান, আর টু এর সময়ে ১৮% বিল একই অধিবেশনে পাশ হয়েছে, আর নরেন্দ্র মোদির সময়ে? ৩৩% আর ৭০% এ এসে দাঁড়িয়েছে, আর এই সবে শেষ হওয়া বাদল অধিবেশন তো রেকর্ড, ১০০% বিলই এই অধিবেশনে পেশ ও হয়েছে, পাশ ও হয়েছে। এই বাদল অধিবেশনেই, ১৪ টা বিল পাশ করতে গড়ে ১০ মিনিটেরও কম সময় লেগেছে, মানে আলোচনা ছাড়াই বিল পাশ হয়ে যাচ্ছে, এবং মাথায় রাখুন বিলগুলো গুরুত্বপূর্ণ, ইন্সিওরেন্স বিলের মত বিল নিয়েও আলোচনাই হচ্ছে না, সরকার বলছেন কী করবো? বিরোধীরা সংসদ চালাতে দিচ্ছে না, বিরোধীরা বলছে সরকার তাদের কথা কানেই তুলছে না, এবং চাপা পড়া মানুষ হলেন দেশের সেই ১৩৫ কোটি জনগন, যাঁরা ভোট দিয়ে সংসদ সদস্যদের নির্বাচন করেছিলেন। কতটা অবহেলা একবার ভাবুন, এই বাদল অধিবেশনে ১৫ টা বিল পাশ হবার, আলোচনা চলার সময়ে এক সেকেন্ডের জন্যও আমাদের প্রধানমন্ত্রী হাজির থাকেননি, আরএসএস বিজেপি সংসদীয় গণতন্ত্র চায় না। চায়নি কোনও দিন। তাঁদের স্বপ্ন তো রাম রাজ্য, যেখানে রামের মুখের কথাই আইন, রাম মনে করেছেন তাই সীতাকে নির্বাসনে যেতে হয়েছে, ফিরিয়ে আনা হলেও রাম মনে করেছেন বলেই সীতাকে আবার অগ্নিপরীক্ষায় নামতে হয়েছে। সবটাই এক রাজার হুকুম, রাজার কথা, রাজার আইন। যাদের স্বপ্ন আদর্শ সেইখানেই আটকে আছে, তাদের কাছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আশা করা যায় না, করছিও না। কিন্তু দোহাই নৌটঙ্কি করবেন না, সাংবাদিকদের ডেকে, চোখের জল ফেলে নাটক করা বন্ধ করুন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
KOLKATA TV LIVE STREAM
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | আজ বঙ্গে প্রচারে মোদির 'ঝোড়ো ইনিংস', ভোটের আবহে ফের কী বার্তা দেবেন মোদি?
02:09
Video thumbnail
Lok Sabha Election 2024 | বীরভূমের BJP মনোনীত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল, অভিযোগ দেবাশিস ধরের
04:53
Video thumbnail
SandeshKhali Video | 'আন্দোলন চালিয়ে যেতে ৭২ জন মহিলাকে টাকা', রহস্য আরও বাড়াল দ্বিতীয় ভিডিয়ো
06:10
Video thumbnail
Sandeshkhali | সন্দেশখালির আন্দোলন কি সাজানো? মোদির কলকাতায় আসার দিনে প্রকাশ্যে দ্বিতীয় ভিডিয়ো
08:42
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | দেখে নিন আজ সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি
17:47
Video thumbnail
পলিট্রিক্সের গ্রিনরুম | মমতা-অভিষেকের আদৌ কি কোনও বিবাদ আছে?
56:44
Video thumbnail
Ranaghat | ভোটের আগেই মিঠুনের হাত ধরে তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণির স্ত্রী বিজেপিতে
03:15
Video thumbnail
Sera 10 | অন্ডালে অমিত শাহকে অভ্যর্থনা কয়লা মাফিয়ার !
19:19
Video thumbnail
Weather | কালবৈশাখীর পূর্বাভাস দক্ষিণবঙ্গের ৬ জেলায়
01:04