প্রীতি সাহা: পেশার কোনও জাত হয় না, ধর্ম হয় না, হয় না কোনও লিঙ্গও। অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় যে তৃপ্তি রয়েছে তা অন্যকিছু থেকে পাওয়া যায় না। এই কথাগুলো আমরা সচরাচর শুনেই থাকি, তবে মেনে চলি ক’জন? সমাজ কী বলবে, প্রতিবেশী কী বলবে আমরা তা নিয়েই বেশি চিন্তায় থাকি। আর এরই মাঝে হাতছাড়া হয়ে যায় কত না জানা অধ্যায়, কত নাম না জানা কাহিনি। তবে এসব কিছুকে পরোয়া না করে যিনি ভালো থাকার জন্য নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যান, জীবনের আসল স্বাদটা তো তিনিই উপভোগ করতে পারেন।
এই ধরুন নবনীতা সাহা। পরিবারে সেইভাবে আর্থিক অভাব নেই। টাকাপয়সা লাগলে স্বামীর থেকেই তা পেতেন। বিয়ের প্রথম দিকে সব ঠিক থাকলেও আস্তে আস্তে সংসারে ঘুণ ধরে যায়। এরপর টাকা চাইলেই শুনতে হত কটূক্তি। হাজারও আশান্তি এড়াতে অবশেষে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হওয়ার লক্ষ্যে বেরিয়ে পড়েন নবনীতা। এখন তিনি বাইক চালক। প্রতিদিন অ্যাপ নির্ভর বাইক নিয়ে সকালে বেরিয়ে পড়েন। তবে বাড়ি কখন ফিরবেন তার ঠিক থাকে না।
আরও পড়ুন: Poyla Baishakh| নববর্ষে কম খরচায় সাজান অন্দরমহল
কাঁকুড়গাছির এক ফ্ল্যাটে দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে সংসার নবনীতার। বাবা বেঁচে থাকতে মেয়ের সব আবদার মেটাতেন। নবনীতার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াল বাবার মৃত্যু। টাকার জন্য সংসারে শুরু হল অশান্তি। শহরের এক নামী ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়ে তাঁর দুই ছেলে। বাবার উগ্রতা তারাও দেখেছে, কিন্তু তাঁর মুখোমুখি প্রতিবাদ জানানোর সাহস হয়ে ওঠেনি কখনও।
হার মানেননি নবনীতা, ভাগ্যকে দোষ না দিয়ে ভাগ্য বদলে সচেষ্ট হয়েছেন। এখন তিনি বাইক নিয়ে ছোটেন শহরের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে। ধুলো, বালি মেখে, ক্লান্তি নিয়ে বাড়িতে ফেরেন প্রতিদিন। তবে সেই ক্লান্তি আসলে শান্তির, এবং অবশ্যই স্বাধীনতার। বাঁচার জন্য যে অক্সিজেন লাগে তা নিজেই জোগান দিচ্ছেন তিনি। নবনীতা দাসের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানায় কলকাতা টিভি ডিজিটাল। আমরা চাই, বাধা ভেঙে তাঁর মতোই এগিয়ে আসুক প্রতিটি নারী।