HomeBig newsইতিহাসের পুরনো পাতা ফেরত না এলেই হয়

ইতিহাসের পুরনো পাতা ফেরত না এলেই হয়

ছত্রিশ বছর আগের শোকগ্রস্ত বিকেলের রোমন্থন করছিলেন মনিন্দর

Follow Us :

চেন্নাই: মনিন্দর সিংকে আজকের দিনে না ধরলে নয়। কিন্তু  রোজই প্রায় দূরদর্শনে যিনি এশিয়ান গেমস কমেন্ট্রি করছেন। তাঁকে ধরা যায় কী করে?

কপালজোরে এক ফোনে দিল্লিতে পাওয়া গেল। ছত্রিশ বছর আগে তিনিই তো চিপক মাঠের ট্র্যাজিক চরিত্র ছিলেন। ঠিক যেমনটা ছিলেন টাই টেস্ট ম্যাচে। দুবারই বিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। দু’বারই শেষ আউট হওয়া ব্যাটসম্যান তিনি। আধুনিক প্রজন্ম মনিন্দরকে চেনে বলে ভরসা হয় না। তাই আবছা পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক।  ক্রিকেটে দেড়শোর বেশি উইকেটের অধিকারী এবং বেদি পরবর্তী ভারতের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বাঁ হাতি স্পিনার। এভাবে বলা যেতে পারে সাতাশির বিশ্বকাপে যেমন ফর্মে ছিলেন, রোববার রোহিত শর্মার হাতে থাকলে কুলদীপ  যাদবকে মাঠে দেখতেন না।

ছিয়াশি সালে তাঁর উইকেট পতনে টেস্ট টাই হয়ে যায়। আর পরের বছর বিশ্বকাপে তিনি আউট হওয়াতে ভারত অশুভ বিশ্বকাপ অভিযান করে মাত্র ১ রানে হেরে। ছত্রিশ বছর আগের শোকগ্রস্ত বিকেলের রোমন্থন করছিলেন মনিন্দর ,”টাই টেস্টে সিঙ্গলসের জন্য পুশ করতে গিয়ে এল বি ডব্লিউ হওয়ার পর সবাই বলেছিল মারলে আমরা জিতে যেতাম। পুশ করতে গেলি কেন ? তাই ওয়ার্ল্ড কাপের ম্যাচটায় মারতে যাই। ভাল স্লোয়ার তার আগে খেলিনি। স্টিভ ও বোকা বানিয়ে বোল্ড করে দিয়েছিল।”

আরও পড়ুন: জাতীয় উদ্বেগে শুভমন যেন মিনি শচীন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী তখন রাজীব গান্ধী। বার্লিন প্রাচীর অক্ষত। ম্যান্ডেলা জেলে। সুনীল গাভাসকর তাঁর জীবনের একাত্তরজন পেস বোলার  খেলে ফেলেছেন। কিন্তু শনিবারের মতো নিজের নামে  জঘন্য ফেক  পোস্টের সম্মুখীন হতে হবে দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। ভাববেন কী করে ? না মোবাইল ফোন না ইন্টারনেট কিছুই যে আবিষ্কার হয়নি। কম্যুনিজমের স্বপ্ন অক্ষত। শপিং মল নামক অভিজ্ঞতার  সঙ্গে ভারতবর্ষের পরিচয় ঘটেনি।

খুব বুড়োটে পৃথিবী মনে হচ্ছে ? তাহলে মাত্র ১৮৭ দিন আগে ফিরি। এই মাঠেই অস্ট্রেলিয়া হারিয়ে দিয়ে গিয়েছে ২২ রানে। এবার চেন্নাই  ম্যাচ এবং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে যিনি রোহিতদের ভেঙেছেন সেই ট্র্যাভিস হেড এখনও আহতের দলে। শুভমন এবং তিনি না থাকা কোথাও কাটাকুটি হয়ে যাবে। সেবার অবশ্য অশ্বিন ছিলেন না। এবার আছেন বলে ভারত তিন স্পিনারের ফাঁদ পাতবে।

ম্যাচের  আগের দিনের তেড়েফুড়ে প্র্যাকটিস দেখে খানিকটা আন্দাজ পাওয়া যায়  টিম কোন রুট ম্যাপে যাচ্ছে? এখানে সেই সুযোগ নেই। বেশি খেলা হতে হতে আজকালকার  ক্রিকেট এমন পর্যায়ে যে বিশ্বকাপ ম্যাচের আগের দিন  অস্ট্রেলিয়া এলই না। ইন্ডিয়ান টিমে বিরাট কোহলিসহ আদ্ধেকও না।  চিপকের বাইরে তা বলে উৎসাহের অভাব নেই। সুধীর গৌতম বরাবরের মতো পতাকা আর শঙ্খ নিয়ে হাজির। তফাতের মধ্যে কলকাতার এক ব্যবসায়ীকে দেখলাম রাহুল দ্রাবিড়ের ছবিওয়ালা টুপি আর হাতে তাঁর পোস্টার পরে ঘুরছেন। কাল গ্যালারিতেও নাকি রাহুলের পোস্টার বারবার ওড়াবেন। টিম প্লেয়ারদের ছেড়ে কোচকে নিয়ে মাতামাতি এই প্রথম ঘটল আর দ্রাবিড় বলেই সম্ভব।

তামিলনাডু ক্রিকেট সংস্থার সচিব ডক্টর বাবাকে আবহাওয়া নিয়ে গভীর চিন্তিত দেখা গেল। বিকেলে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। কালও নাকি হালকা হওয়ার আশংকা। আমার মনে হল ম্যাচকে বিপন্ন না করে সামান্য বৃষ্টি হলে আখেরে দর্শকদের লাভ। নইলে মাথায় ছাদহীন বসে এই গরমে  যদি একশো ওভার দেখতে হয় , বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। চেন্নাইয়ের এক ক্রিকেটপ্রেমী বাঙ্গালি যেমন বললেন ওই গরমে সেদ্ধ হওয়ার  চেয়ে বাড়ির টিভি অনেক আরামের । এমনিতে বিশ্বকাপে ভারতের সব ম্যাচেই ফুল হাউস। মাঠ ভরা নিয়ে ন্যূনতম সমস্যা নেই। অন্য রাজ্য এবং বিদেশ থেকে যেমন প্রচুর লোক শনিবার যেমন শহরে ঢুকলেন,বাকি ম্যাচে দেশের আর সব সিটিতেও তাই হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কথাবার্তা  থেকে পরিষ্কার আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে যে আইপিএল অভ্যেস খারাপ করে দিয়েছে। আর সিএসকে মানে তো পৃথক মাত্রার ক্রিকেট। যে জড়োয়ার মোতি  হয়ে বিরাজ করেন এদের প্রিয়তম থালা। টিমের প্র্যাক্টিস  এরিয়ার খুব কাছে এক বিশাল স্মৃতিচিহ্ন দেখাতে নিয়ে গেলেন  তামিলনাড়ু ক্রিকেট সচিব। প্রায় কুড়িফুট উঁচু ধোনি ওয়াল। যেখানে তাঁর বিশাল  মুরাল। ওয়ালের উদ্বোধন হয়েছে শেষ আইপিএলের সময়। এখানেই শেষ নয়। মিডিয়া গেট থেকে  বেরিয়ে বাঁ  দিকে রাস্তার ওপর চোখে পড়ল একটা দোকান। নাম ধোনি স্পোর্টস। ধোনি মিউজিয়ামও নাকি চিদম্বরমের ভেতর হওয়ার কথা চলছে।

থাকেন ১৭২৪ কিলোমিটার দূরের রাঁচিতে। কিন্তু চেন্নাই যেন তাঁকে সর্বোত্তম সাম্মানিক  নাগরিকত্ব দিয়ে রেখেছে। ধোনির জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন চোখের সমস্যায়  বিব্রত বলে ম্যাচে অনিশ্চিত  শোনা গেল। কিন্তু চেন্নাইয়ের প্রিয়তম সন্তান কি চমকে দিতে আসতে পারেন  বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আবির্ভূত হয়ে ? সচিব বললেন, “বিলিয়ন ডলার  প্রশ্ন। উত্তরটা ও ছাড়া কারও  কাছে আছে বলে মনে  হয় না।” বোঝাই যাচ্ছে ধোনি বাকি পৃথিবীর মতো শ্রীনি ছাড়া স্থানীয় কর্তাব্যক্তিদের কাছেও হেঁয়ালি।

রোহিত শর্মার কাছে অবশ্য কোনও হেঁয়ালি নেই। এর ফল ঠিক করবে তাঁর গদিতে থেকে যাওয়া অথবা বাইরে যেতে বলা। ভারত অধিনায়ক নিজে পরিষ্কার বললেনও, “বিশ্বকাপ  জিততে ব্যর্থ হলে  আমাদের  কেরিয়ারের পূর্ণতা আসবে না। ক্রিকেট বিশ্বের সর্বোত্তম ইভেন্ট আমার কাছে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। ” শুনে মনে হল এশিয়ান গেমসে এতগুলো সোনা জয়ের পেছনে যেমন স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার অবদান স্বীকৃত এবং ধন্য ধন্য হচ্ছে। তেমনি এবার পরীক্ষিত হওয়ার পালা বেঙ্গালুরু এনসিএ-র। তার ডাক্তারেরা  কি ঠিকঠাক সারাতে পেরেছেন  টিমের চোট  পাওয়া পাঁচ-ছজন ক্রিকেটারকে? দেড় মাস  জুড়ে যাঁদের টপ কন্ডিশনে না পেলে রোহিতের জীবনে পূর্ণতা আসবে না।

কী যেন  বলে কেবিসিতে —ইওর টাইম স্টার্টস নাউ !

দেখুন আরও খবর:

Sunil Gavaskar | পোস্ট বিতর্কে কলকাতা টিভি’কে কী বললেন গাভাসকর? দেখুন ভিডিও

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments