সুন্দরবন: সুন্দরবনের (Sundarban) দুর্গাদের (Durga) হাতেই গড়ে উঠছে মা দুর্গার (Maa Durga) প্রতিমা। বসিরহাটের প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকার দুর্গাদের হাতের কারুকার্যে তিলে তিলে গড়ে উঠছে মায়ের মৃন্ময়ী রূপ। সেজন্য নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিনরাত এক করে কাজ করছেন স্থানীয় মহিলারা। সংসার সামলে তাঁরা নিপুণ হাতে তৈরি করছেন দুর্গা প্রতিমা। জোরকদমে কাজ চলছে। এবার বৃষ্টির পরিমাণ কম। ফলে কাঠের কাঠামোতে খড়, তার উপরে মাটির প্রলেপ দিয়ে শুকোতে দেরি হচ্ছে না। ইছামতি নদী থেকে এঁটেল মাটি এনে তারপরে বাঁশ ও কাঠের কাঠামোর উপরে কাজ চলছে। গত ৩০ বছর ধরে এভাবেই প্রতিমা বানিয়ে যাচ্ছেন দুর্গা, শ্যামলী, অনিমারা। তাঁদের হাতে গড়া প্রতিমা পাড়ি দেয় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। এবারও সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় প্রতিমা শিল্পীরা।
কিন্তু জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই প্রত্যন্ত এলাকার মহিলারা প্রতিমা গড়তে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। পুজো কমিটিগুলি দরদাম করছে। তারা যে দর দিচ্ছে, তাতে পোষাচ্ছে না শিল্পীদের। অনিমারা বলছেন, মাটি থেকে শুরু করে দড়ি, রং, প্রতিমার পোষাক, সবেরই দাম গত বারের থেকে বেড়েছে। তার মধ্যে করোনার পর আমাদের আর্থিক হাল আরও খারাপ হয়ে পড়েছে। আমফানের সময়কার ক্ষতি এখনও সামাল দিয়ে ওঠা যায়নি। তবু একটা তাগিদ থেকে আমরা প্রতিমা গড়ি। কিন্তু আর পেরে উঠছি না।
আরও পড়ুন:Girl Assaulted | MP | জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ মন্দিরের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে
সব মিলিয়ে যথেষ্ট সংকটে সুন্দরবনের এই প্রত্যন্ত এলাকার শিল্পীরা। এদিকে বংশপরম্পরার এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। দুর্গাপুজোর আর ৮০ দিন বাকি, তাই ব্যস্ততা একেবারে তুঙ্গে। মহিলা শিল্পীদের পাশাপাশি পুরুষ শিল্পীরাও সহযোগিতা করছেন। এখন চলছে ঠাকুরের কাঠামো তৈরির কাজ। তারপর মাটির প্রলেপ পড়বে। শেষে হবে রংয়ের কাজ। ঘরে ঘরে মা-বাবাদের সঙ্গে কাজে হাত লাগিয়েছে সন্তানরাও। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, অনেকেই এখন এই জীবিকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। পরিশ্রম বেশি হলেও সেই পরিমাণ অর্থ উপার্জন হচ্ছে না। তাই পরবর্তী প্রজন্ম অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।
মৃৎশিল্পী সুশান্ত বিশ্বাস বলেন, বংশপরম্পরায় আমরা ঠাকুর বানাই। কিন্তু যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তাতে প্রতিমার তৈরি করার খরচ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। সেই পরিমাণ দাম পাচ্ছি না। আমাদের নতুন প্রজন্ম এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইছে। আমরা যত দিন পারব, কাজ করে যাব। পরবর্তীকালে ছেলেমেয়েরা কী করবে, জানি না।