কলকাতা: উৎসব অনুষ্ঠানে হাজিরা পঞ্চাশ। পুরভোটের প্রচার (Omicron Virus) সভায় কেন পাঁচশো, প্রশ্ন তুলল চিকিৎসক মহল (Omicron Covod-19 Virus) । বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, কলকাতা পুরভোটের পরও শিক্ষা নিল না রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকার। আসন্ন পুরভোটের প্রচার সভায় এত লোক হলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি (Omicron Coronavirus) তৈরি হবে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। একধাপ এগিয়ে কোনও কোনও চিকিৎসক পুরভোট আপাতত পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন , এই মুহূর্তে ভিড় এড়ানোটাই সকলের মূল কর্তব্য হওয়া উচিৎ।
পুরভোটের সভায় কেন ৫০০ জনে ছাড় দেওয়া হল, তা নিয়ে কলকাতা টিভি ডিজিটাল একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে। কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, ‘রাজ্য সরকারের দেওয়া কোভিড গাইডলাইন একেবারেই মানা হচ্ছে না। প্রচারে ৫০০ জন বলাটা শুধুই মুখের কথা।’ আংশিক করোনা বিধিনিষেধ জারি করেছে রাজ্য। বলা হয়েছে দূরত্ববিধি মেনে চলতে। আবার সর্বাধিক ৫০০ জন নিয়ে ভোট প্রচারের অনুমতি দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এই প্রসঙ্গ তুলে অরিন্দম বিশ্বাসের মত, ৫০০ জনে ছাড় নয়,সভা মিছিল বন্ধ করে দেওয়া হোক। প্রয়োজন হলে পুরভোট ভোট পিছিয়ে দিতে হবে। একদিকে প্রচারে ৫০০ জন ছাড় দিয়েছে অন্যদিকে, শহরে মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোন বাড়ানো হচ্ছে। তাঁর আরও অভিযোগ, কমিশনের ছাড় ৫০০ জনেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা ৫ হাজারও ছাড়িয়ে যেতে পারে। কলকাতার ভোটের অভিজ্ঞতা সেরকমই বলছে।
ভাইরোলজিস্ট সুমন পোদ্দারের গলাতেও একই কথা উঠে এসেছে। তিনি জানিয়েছেন, ভোটপ্রচারে ৫০০ জনকে ছাড় দেওয়া যুক্তিগ্রাহ্য বিষয় নয়। মেপে মেপে কেউ প্রচারে আসবেন না। ফলে জনসমাগমে আরও বাড়বে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনার তৃতীয় ঢেউ যখন দাপটে ব্যাটিং শুরু করেছিল তখন এ ধরনের ছাড় আরও বড় বিপদ ডেকে আনবে। ভোটের প্রচার সম্পূর্ণ ভার্চুয়ালি হলে সংক্রমণে আরও লাগাম টানা যেত বলে দাবি ডাক্তার পোদ্দারের। তিনি মনে করেন ভোটের স্বার্থে সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে সব দোষ সরকারের নয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পেরিয়েও জনসাধারণের মধ্যে এতটুকু সচেতনতা আসেনি।
তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে মুখ খোলেননি অতিমারি বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায়। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ন মানুষের জীবন। একজন চিকিৎসক হিসেবে সেটুকুই করে চলেছি। বাকিটা রাজনৈতিক বিষয়।
উৎসবের মরশুমে একধাক্কায় যেভাবে সংক্রমণ গ্রাফ বেড়েছে। সেখানে ভোটের পর রাজ্যে কী পরিস্থিতি হয় তা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কাজল কৃষ্ণ বনিক। তিনি বলেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। প্রশাসন সঠিক ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে জনসমাগম যত বাড়বে আক্রান্তের সংখ্যাও তত বাড়বে। এক শ্রেণির মানুষের বিশৃঙ্খলতার পরিণামে ভুগতে হচ্ছে আর এক শ্রেণিকে। তবে ১৫ দিন যাওয়ার পর বোঝা যাবে মানুষ কতটা কোভিড নির্দেশিকা মেনেছে।
কলকাতার ভোটের সময় ভিড় কেমন হয়েছিল,শহরবাসী তা এখনই ভুলে যায়নি। ভোটের প্রচার থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ পর্যন্ত মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস বিপদ বাড়িয়েছে অনেকটাই। তারপ্র বড়দিন,বর্ষশেষ, বর্ষবরণের উতসবেও লাগামছাড়া ভিড় দেখা গিয়েছে। তার ফল বোঝা যাচ্ছে করোনার দৈনিক সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফে।তাঁর মধ্যেই ২২ জানুয়ারি ফের রাজ্যে ৪ পুরসভায় ভোট। তা নিয়েই চিন্তিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।