বসিরহাট: তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলে বসিরহাটে সোমবার রাতে গুলিবিদ্ধ হন এক পুলিশকর্মী। এই ঘটনাকে কেন্দ্র মঙ্গলবার সকাল থেকে বসিরহাটের একাধিক এলাকায় চলে বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ মিছিল। রাস্তা অবরোধের পাশাপাশি টায়ার জ্বালিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে চলে বিভোক্ষ কর্মসূচি। এদিকে টাকি কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও কলেজের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় তৃণমূল নেতা সহ মোট ৪১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। তবে তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, প্রকৃত দোষীদের না ধরে পুলিশ নির্দোষদের গ্রেফতার করেছে। এর প্রতিবাদে এদিন বসিরহাট থানা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা। পরিস্থিতি বেগতিক হতেই লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, ব্লক সভাপতি সিরাজুল এবং জেলা পরিষদের সদস্য শাহানুর মণ্ডলের মধ্যে অনেকদিন ধরেই গোলমাল। এর আগেও এই দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে বসিরহাটে একাধিকবার সংঘর্ষ ঘটে। সোমবার রাতেও তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে দুই গোষ্ঠার মধ্যে প্রথমে বচসা ও গালিগালাজ চলে। পরে দুপক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান বুলবুলের দাবি, গতকাল ঝামেলা থামাতেই তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। পুলিশও পৌঁছয়। তখনই এক দুষ্কৃতী তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশ কনস্টেবল প্রভাত সরকার তাঁকে সরিয়ে দেন। সেই গুলি এসে লাগে ওই পুলিশকর্মীর বাঁ কাঁধে। জখম অবস্থায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে যাওয়া হয়। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে গোলমাল থামাতে পুলিশও শূন্যে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। সোমবার রাত দশটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে টাকি রোডের উপর। পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার-সহ উচ্চপদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।
আরও পড়ুন:Attack on Police: নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করতে গিয়ে আক্রান্ত এসআই
এদিন সকাল থেকেই পরিস্তিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দফায় দফায় শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর মিছিল পালটা মিছিল হয়। চলে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধও। তৃণমূলের বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই দুর্ভাগ্যজনক। গতকাল আইএসএফ আশ্রীত দুষ্কৃতীরা এই হামলা চালিয়েছে।
এই ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, আমি আগেই বলছিলাম পুলিশের এখন বড় কাজ হচ্ছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানো। টাকা পয়সা তুলে দেওয়া, সংগঠনের কাজ করা, ভোটে জেতানো। এখন তৃণমূলের মধ্যে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে সেটা পুলিশকে দিয়ে মেটাতে হচ্ছে এবং পুলিশকে গুলি খেতে হচ্ছে। সমাজবিরোধীদের নিয়ে তৃণমূল পার্টি। গন্ডগোল মারপিট তো হবেই। পুলিশের ক্ষমতা নেই সমাজবিরোধীদের গায়ে হাত দেওয়া। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, আজকে পুলিশ কনস্টেবল গুলি খাচ্ছে। কয়েকদিন বাদে দেখবেন পুলিশ সুপার গুলি খাচ্ছেন তৃণমূলের গোষ্ঠাদ্বন্দ্ব সামাল দিতে গিয়ে।