চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত কলকাতা পুর এলাকায় (KMC) ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৬০৫২। যা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় খানিকটা বেশি। সংক্রমণ বৃদ্ধির নেপথ্য কারণ অনেক। তারই বেশ কয়েকটি দিক তুলে ধরা হচ্ছে পুরসভার সাম্প্রতিক তথ্যানুসন্ধানে । প্রসঙ্গত, উত্তর কলকাতায় (বোরো ১ থেকে বোরো ৭) ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৭১ ( ২২.৬%) এবং দক্ষিণ কলকাতায় (বোরো ৮ থেকে বোরো ১৪) ৪৬২৭ (৭৬.৫%)। অর্থাৎ, উত্তরের তুলনায়
দক্ষিণে ডেঙ্গির সংক্রমণ বেশি।
পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রয়োজনীয় সমীক্ষা ও গবেষণায় জানা গিয়েছে, উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ কলকাতায় ইডিস মশার সম্ভাব্য মনপসন্দ আঁতুড়ঘর যেমন খালি জমিসহ নির্মীয়মাণ বাড়ি, পুকুর, কুয়োর সংখ্যা অনেক বেশি। যেখানে উত্তর কলকাতায় খালি জমির সংখ্যা ৩৮৩টি (১.৯%) সেখানে দক্ষিণে খালি জমির সংখ্যা ৩০৩৮টি (৭৮.৮%)। তেমনই উত্তরে নির্মীয়মাণ বাড়ি, পুকুর, নর্দমা, পাতকুয়ার সংখ্যা যথাক্রমে ১৬৮৪ (৩৭%), ৪৩৩ (২.৫%), ১৫৪৫ (১২%) এবং ১৭৬৬ (১৫%)। সেখানে দক্ষিণে নির্মীয়মাণ বাড়ি, পুকুর, নর্দমা, পাতকুয়ার সংখ্যা যথাক্রমে ২৮৪৪ (৬৩%), ১৪৯০ (৭৭.৫%), ১১২০৬ (৮৮%) এবং ১০০৪৭ (৮৫%)।
কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন রোগ ডেঙ্গি (Dengue Fever) মোকাবিলার জন্যে বিগত ১০-১২ বছরে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির পাশাপাশি, মশা দমনের কর্মপদ্ধতিরও বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটিয়েছে পুর স্বাস্থ্য দফতর। ফিল্ড কর্মীসহ অন্যান্য কর্মীদের হাতে-কলমে মশার লার্ভা চেনানোর জন্য মশা গবেষণাগারের প্রতিষ্ঠা, ত্রিস্তরীয় নজরদারিতে মশার উৎস বিনাশ, বছরের শুরু থেকেই মশাকে আঁতুড়ে বিনাশের উদ্যোগ, দাঁড় টানা নৌকার সাহায্যে শহরের বিভিন্ন খালে কার্যকরী কীটনাশক স্প্রে করে কিউলেক্স মশা সহ অন্যান্য মশার লার্ভা দমন ইত্যাদি।
এছাড়াও সমস্যা মোকাবিলার জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক মশার সম্ভাব্য আঁতুড়ঘরের ডাটা ব্যাঙ্ক তৈরি করে তার ভিত্তিতে প্রাক-বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে মশার প্রজননের ওপর নজরদারি, মশার উৎস বিনাশের জন্য বিভিন্ন দফতরের কর্মীদের নিয়ে ওয়ার্ড ভিত্তিক যৌথ অভিযান চালানো, পুর আইনের 496A ধারায় নোটিশ জারি করা এবং সেই ধারায় মিউনিসিপ্যাল কোর্টে (Municipal Court) মামলা দায়ের করে মশা দমনের মত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে রঙিন লিফলেট বিলি করা, হোর্ডিং-ব্যানার, অটো মাইকিং, হ্যান্ড মাইকিং, টিভিতে বিজ্ঞাপণ বিগত এক দশক ধরে এই সব কাজ করে আসছে কলকাতা পুর স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটছে না। আর সেজন্যই সাধারণ মানুষকে আরও বেসি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পাশাপাশি আবেদনও জানাচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ।