Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | সিএএ লাগু হয়ে গেল, কী করে বুঝবেন যে আপনি...
Fourth Pillar

Fourth Pillar | সিএএ লাগু হয়ে গেল, কী করে বুঝবেন যে আপনি দেশের নাগরিক?

নাগরিক কারা? ওই ৫৪২ জন সাংসদ? বা দেশ জুড়ে রাজ্যগুলোর এমএলএ?

Follow Us :

২০১৯-এ বিজেপি, নরেন্দ্র মোদির সরকার আবার ক্ষমতায় এসেছিল, ৩০৩ জন সাংসদকে নিয়ে। তার সঙ্গে ছিল এনডিএ-র শরিক দলের সাংসদ। এক নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই সিএএ বা নাগরিকত্ব বিল পাশ করিয়েছিল ১১ ডিসেম্বর ২০১৯-এ। এই বিলে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের যে সমস্ত হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রিস্টান পড়শি ভারতবর্ষে আসবেন যদি তাঁরা ধর্মের কারণে লাঞ্ছিত হন উৎপীড়িত হন, তা হলে তাদের আমাদের দেশে পাঁচ বছর থাকার পরে নাগরিক বলে মেনে নেওয়া হবে, অবশ্যই তাদের এর জন্য আবেদন করতে হবে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই তালিকায় মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা নেই এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করা নেই। কিন্তু আমরা জানি পাকিস্তানে আহমেদিয়া শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজন ধর্মীয় কারণে উৎপীড়িত হয়ে থাকেন, বার্মার রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর অত্যাচার হচ্ছে, শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ রাষ্ট্রবাদ মাঝেমধ্যেই হিংস্র আক্রমণ চালাচ্ছে সেখানকার সংখ্যালঘু মানুষদের উপর। বেছে বেছে তিনটে দেশ এবং একটা সম্প্রদায়কে বাদ দিয়ে এরকম একটা বিলা আনা হল কেন? দেশের সুরক্ষার জন্য, নিপীড়িত হিন্দুদের জন্য নাকি এই বিল পাশ করানো হয়েছিল, তাহলে তা লাগু করা হল না কেন? কেন সেই বিলের রুলবুক এখনও আমাদের সামনে নেই? কেন এই নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বিজেপিকে নতুন করে সিএএ লাগু করার ঘোষণা করতে হল? সিএএ লাগু হয়ে গেল, এবার আপনি যে দেশের নাগরিক সেটা বুঝবেন কী করে? সাধারণ বিচার বুদ্ধি বলে, যাঁরা ভোট দিয়ে দেশের সাংসদ, বিধায়ক নির্বাচিত করছেন, যাঁদের ভোটার কার্ড আছে, আধার কার্ড আছে, তাঁরাই নাগরিক। কিন্তু বিজেপির মাথায় অন্য কিছু আছে, তারা দেশের নাগরিকত্বের অন্য শর্ত তৈরি করতে চায়, আর চায় বলেই তাদের এক নতুন নাগরিকত্ব বিলের দরকার হল।

এই বিল কখন কার্যকর হবে? যখন আপনি আবেদন করবেন যে হুজুর আমি ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে নিপীড়িত হয়ে এদেশে এসেছি, বা আমার বাবা-মা ওই একই কারণে এদেশে এসেছেন, আমি হিন্দু বা জৈন, বা বৌদ্ধ বা শিখ, আমাকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হোক, তখন এই বিলের আওতায় আপনাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এই আইন অনুযায়ী নাগরিকত্ব পেতে গেলে নিজেকে বাংলাদেশি বা পাকিস্তানি বা আফগান নাগরিক ঘোষণা করতেই হবে। দিতে হবে সেই দেশের কোনও একটি ডকুমেন্ট ভ্যালিড বা ইনভ্যালিড পাসপোর্ট, বার্থ সার্টিফিকেট, স্কুল-কলেজ সার্টফিকেট, সেদেশের জমির দলিল, বা পূর্বপুরুষের বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের নাগরিকত্বের কোনও প্রমাণ। আর দিতে হবে ২০১৪-র আগে ভারতে উপস্থিতির কোনও একটি ডকুমেন্ট। যে ফর্মে আবেদন জানাতে হবে সেটা একবার ভালো দেখুন, এবং আপনি আবেদন করবেন আর ঝপাং করে নাগরিকত্ব দিয়ে দেবে? না তেমনও নয়, তদন্ত হবে, সাক্ষ্যপ্রমাণ যাচাই হবে, তারপর আপনাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। আচ্ছা যতদিন সেই নাগরিকত্ব না দেওয়া হয়, ততদিন আপনি কী? আপনি বিদেশি। আপনার এদেশে আইনত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার অধিকার নেই, সরকারি ভর্তুকি নেওয়ার বা পাওয়ার অধিকার নেই, সরকারি চাকরির অধিকার নেই, জমি কেনার অধিকার নেই। আচ্ছা যে মানুষটা এই দেশে আছেন, বসবাস করছেন, চাকরি করছেন, উপার্জন করছেন, পিএম কিসানের টাকা পাচ্ছেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পাচ্ছেন, স্বাস্থ্যসাথীর চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন, তিনি খামোখা নাগরিকত্ব নিয়ে ভাববেন কেন? নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করবেন কেন?

বিল লাগু করার ঘোষণা হবার মিনিট খানেকের মধ্যে কাঁথির অবোধ অধিকারীর টুইট এসেছে, লিখেছেন আমাদের মতুয়া ভাইবোনেদের আর চিন্তাই রইল না, এবার তাঁরা স্থায়ী নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। এই স্থায়ী নাগরিকত্ব বিষয়টা কী? কারা সেই স্থায়ী নাগরিকত্ব পাবেন? যাঁরা ভোট দিয়ে বিজেপির সাংসদকে নির্বাচিত করে দিল্লি পাঠিয়েছিল, তাঁরা? তাঁরা নাগরিক নন? আর তাঁরা আবেদন করবেনই বা কেন? আর করলেই নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন এমনও তো বিলে বলা নেই। আসলে বিল পাশ হয়ে যাওয়ার চার বছর তিন মাস তাকে লাগু করা হয়নি, যাতে নির্বাচনের আগে আবার নতুন করে হিন্দু-মুসলমান জিগির তোলা যায়। দুনিয়ার ৫০-৬০টা দেশ ভগবান, আল্লা, গডের নামে শপথ নিয়ে তাদের রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করে। আমাদের দেশের সংবিধান রচনার সময় এমন কথা যে আসেনি তাও নয়, এসেছিল। এইচ বি কামাথ এই প্রস্তাব এনেছিলেন, ভাগবানের নামে শপথ দিয়ে সংবিধান শুরু হোক। সংবিধান সভায় তা পেশ হয়েছিল, সেদিন ভগবান, মানে ওই প্রস্তাব হেরে গিয়েছিল। আমাদের সংবিধান তাই প্রথম দিন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ করার প্রথম কথাটি আসে অধুনা বিজেপির ফিলোজফিকাল সংগঠন, তাদের দার্শনিক নেতা সাভারকরের কাছ থেকে। তিনিই বলেন হিন্দু মুসলমান দুটো নেশন, দুটো আলাদা জাতি, এরা একসঙ্গে থাকতে পারবে না। এরপর জিন্নাহ এই বিষয়টাকে নিজের মতো করে বলতে থাকেন, ইংরেজরা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। তারা জিন্নাহের দাবি অনুযায়ী ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান মেনে নেন। কিন্তু ভারতবর্ষ ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি হয়নি, ভারতবর্ষ এক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবেই উঠে আসে। এক বৌদ্ধ বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর যিনি আজীবন হিন্দু রাষ্ট্রবাদের মনুবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তিনি আমাদের স্বাধীন ভারতবর্ষের সংবিধানের প্রণেতা হন। অথচ অমিত শাহ বেমালুম বলেন, আমাদের দেশ ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয়েছে, সংসদে দাঁড়িয়েই বলেন। কিন্তু যিনি বলেছিলেন গর্বের সঙ্গে বলো আমি হিন্দু সেই স্বামী বিবেকানন্দ ১১ সেপ্টেম্বর চিকাগোতে বলেছিলেন, “যে ধর্ম সারা বিশ্বকে সহিষ্ণুতা ও শাশ্বতভাবে সকলকে গ্রহণ করার শিক্ষা দিয়ে এসেছে, সেই ধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে আমি গর্বিত। যে জাতি জগতের সব দেশ ও সব ধর্মের নিপীড়িত ও উদ্বাস্তু নরনারীকে আশ্রয় প্রদান করেছে, সেই ধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে আমি গর্বিত।”

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ | তৃণমূল জানিয়ে দিল ৪২টা আসনে কারা লড়ছে, কিন্তু জিতবে ক’জন?

সংবিধানের আর্টিকল ১৪ বলছে, ধর্ম লিঙ্গ জাতি বর্ণ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে কোনও ভেদাভেদ করা যাবে না। একথার জবাবে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন কেন? তাহলে মাইনরিটিদের, শিডিউল ক্লাস বা শিডিউল ট্রাইবদের জন্য আলাদা সংরক্ষণ হয়, সেটা কি আর্টিকল ১৪ মেনে হয়। আসলে অমিত শাহ হিন্দুরাষ্ট্র তৈরি করার উত্তেজনায় সংবিধানটাও ভুলে গেছেন। ওখানে কেবল ভেদাভেদ classification কথাটা বলা হয়নি, বলা হয়েছে Reasonable Classification-এর কথা। অর্থাৎ যদি ভেদাভেদ করাও হয় তাহলে তার যুক্তি থাকতে হবে। যেরকম ধরুন ১৮ বছরের বেশি বয়স না হলে সে কোনও আইনি চুক্তি করতে পারবে না। যাতে কোনও নাবালককে ঠকিয়ে না নেওয়া হয় তাই এই বয়সের ভেদাভেদ, আর্মির আইন কানুন আর সিভিলিয়ানদের আইন কানুন আলাদা, ম্যানেজার আর পিওনের মাইনে আলাদা। এরপর বলা আছে সেই classification কেন করা হল? যে লক্ষ্যে করা হল, সেটা যেন ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে। যুগ যুগ ধরে পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য সংরক্ষণ যেমন একটা উদাহরণ। এবং ইচ্ছে হলেই এই classification করা যাবে না, তারও একটা যুক্তি দরকার। নাগরিকত্ব সংশোধন বিলে কেন মুসলমানদের বাদ দেওয়া হল? কেন গোর্খাদের কথা বলা হল না, কেন তামিল শরণার্থীদের কথা বলা হল না? কেন শিয়া বা আহমদিয়াদের কথা বলা হল না তার কোনও উত্তর নেই এই বিলে যা আজ লাগু করার কথা বলা হল।

অসমে বেশ কিছুদিন আগে ১৬০০ কোটি টাকা খরচ করে এনআরসি হয়েছিল। অসম চুক্তিতেই এই এনআরসি-র কথা বলা ছিল। তখন বলা হয়েছিল দেড় দু’ কোটি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে খেদিয়ে দেওয়া হবে, কোথায় খেদানো হবে তা অবশ্য বলা হয়নি। তো যাই হোক এনআরসি হল। খোদা পাহাড় পর নিকলি চুহা। পাহাড় খুঁড়ে ইঁদুর বার করা হল। ১৯ লক্ষ সন্দেহজনক মানুষ পাওয়া গেল, তারমধ্যে আবার ১৪ লক্ষ বাঙালি হিন্দু, ১ লক্ষের কাছাকাছি গোর্খা। রইল বাকি ৪ লক্ষ নাকি ভয়ঙ্কর মুসলমান অনুপ্রবেশকারী। এবার যদি সিএএ মানে এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল লাগু করা হয় তাহলে অন্তত ১৪ লক্ষ হিন্দু তো আবার নাগরিক। গোর্খাদের কী হবে? মুসলমান সহনাগরিকদের কী হবে? তাঁদের কোথায় রাখা হবে? কোনও দেশ তো তাঁদের নেবে না, তাহলে এই দীর্ঘ বছর এদেশেই থেকে যাওয়া মানুষদের জন্য জেল তৈরি হবে? নাকি ফাইনাল সলিউশন? আবার একটা হলোকাস্ট? বেদ উপনিষদের দেশ আমাদের ভারতবর্ষ, যে দেশ বলেছিল ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ সেই দেশের থেকে কিছু মানুষকে তাড়ানোর জন্য আলোচনা চলেছে গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ পীঠস্থান সংসদে, তারপর তা আইন হয়েছে, এবার তা লাগু হবে। উদ্ভট প্রশ্ন, নাগরিক কারা হবে কারা হবে না ? এই দল বলছে আমরা বিরোধিতা করছি, ওই দল সমর্থন করছে, কখনও এই দল ক্ষমতায় আসবে কখনও ওই দল আসবে। আমরা একবার একে ভোট দেব, একবার ওকে ভোট দেব কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছেন নাগরিক কারা হবে কারা হবে না তা নিয়ে আইন হচ্ছে কিন্তু নাগরিক হয়ে কী লাভ হবে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না।

নাগরিক কারা? ওই ৫৪২ জন সাংসদ? বা দেশ জুড়ে রাজ্যগুলোর এমএলএ? কারা? টাটা বিড়লা, গোয়েঙ্কা ডালমিয়া, অমিতাভ বচ্চন, সলমন খান, আশা ভোঁসলে, রজনীকান্ত? কারা? এই নাগরিকত্ব থাকবে কি না থাকবে নিয়ে তাদের কি কোনও মাথাব্যথা আছে? ধরুন অক্ষয় কুমার, প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, কঠিন প্রশ্ন আপনি কি আম কেটে কেটে খান না চুষে? উট কি কাঁটা বেছে খায়? মনে পড়ে গেল। কী এসে যায় এনাদের? সংবিধানে সমানতার অধিকার। কীসের সমানতা? Equality? হাস্যকর কথা। দেশের এক, মাত্র এক শতাংশ মানুষের কাছে আছে দেশের ৫১ শতাংশ সম্পদ। বাকি ৯ শতাংশ মানুষের কাছে আছে ২৬ শতাংশ সম্পদ, যাদেরকে উচ্চবিত্ত বলা হয়। মানে বড়লোক আর উচ্চবিত্তদের কাছে, দেশের ১০ শতাংশ মানুষের কাছে আছে দেশের ৭৭.৪ শতাংশ সম্পদ। মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী, যারা সর্বদা ভয়ে ভয়ে থাকে এই বুঝি চাকরি গেল, এই বুঝি মাইনে বন্ধ হল, বাকি পড়ে যায় বাড়ি কেনার লোনের প্রিমিয়াম, সেই মধ্যবিত্ত ৩০ শতাশ মানুষের কাছে আছে ১৬.৮ শতাংশ সম্পদ। বাকি ৬০ শতাংশ, রবি ঠাকুরের ভাষায় যারা কাজ করে নগরে বন্দরে, চাষ করে মাছ ধরে গাড়ি চালায়, মেরামত করে, বাড়ি তৈরি করে সেই ৬০ শতাংশের মানুষের কাছে ৪.৭ শতাংশ। যদি ভারতবর্ষের কাছে ১০০ টাকা থাকে তাহলে ১ শতাংশের কাছে আছে ৫০ টাকা, আর ৬০ শতাংশের কাছে আছে ৪ টাকা ৭০ পয়সা। সমান অধিকার? ফাজলামি হচ্ছে? ৪০-৫০-৬০ বছর ধরে এদেশে থাকা মানুষজনকে নাগরিক করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন কাঁথির খোকাবাবু, আর আমরা তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনবো?

ভগৎ সিং ফাঁসিকাঠে প্রাণ দিয়েছিলেন, লিখেছিলেন বই ‘কেন আমি নাস্তিক’। নাস্তিক ছিলেন উনি, আসফাকুল্লা ফাঁসি কাঠে প্রাণ দিলেন, চন্দ্রশেখর আজাদ গুলি খেয়ে মরলেন। এরা মুসলমান দেশ না হিন্দু দেশ, ভেবেছিলেন? নেতাজির আইএনএ সৈনিকরা ধর্ম নির্বিশেষে এক সঙ্গে খেতেন, নেতাজি মুসলমান বা হিন্দু দেশের কথা চিন্তাও করেননি। করেছিলেন দু’ জন। প্রথম জন সাভারকর, বি ডি সাভারকর, যিনি ইংরেজদের কাছে মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন যে হিন্দু আর মুসলমান দুটো আলাদা জাতি, তারা একসঙ্গে থাকতে পারে না, তারা একে অন্যের শত্রু। ১৯২৩ সালে এই দ্বিজাতি তত্ত্বের কথা সাভারকর লিখেছিলেন। মহম্মদ জিন্নাহ এই দ্বিজাতি তত্ত্ব গ্রহণ করেন এবং ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তানের দাবি তোলেন। স্বাধীনতার লড়াইয়ের এক চরম পর্যায়ে যখন সারা দেশ বলছে ইংরেজ ভারত ছাড়ো, ১৯৪২ এর সেই আন্দোলনে শহীদ হচ্ছেন মাতঙ্গিনি হাজরা, সারা দেশ উত্তাল। ঠিক সেই সময় দুটো সংগঠন ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করে। প্রথমটা হল মুসলিম লিগ দ্বিতীয়টা হল আরএসএস। দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা একটা দল আবার দেশ সমাজকে ভাঙতে চাইছে, আগুন লাগাতে চাইছে, হিন্দু মুসলমানের এতদিনের সম্পর্কের ইতি চাইছে। সেই মাতঙ্গিনীর পবিত্র ভূমি থেকে এক অবোধ অধিকারী নাগরিকত্বের প্রশ্ন তুলছেন। রুখে দাঁড়ান, রুখে দাঁড়ান না হলে দেশ টুকরো হবে। দেশের সংবিধান হাতে নিয়ে শপথ নিন, আমার সহনাগরিকের একজনকেও ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যেতে দেব না, কাগজ দেখাব না, সিএএ মানবো না।

RELATED ARTICLES

Most Popular