Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: দ্য কাশ্মীর ফাইলস (পর্ব-২)

চতুর্থ স্তম্ভ: দ্য কাশ্মীর ফাইলস (পর্ব-২)

Follow Us :

গতকাল আমরা আলোচনা করেছিলাম সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি কাশ্মীর ফাইলস নিয়ে, যে ছবি নিয়ে বলতে গিয়ে সটান ১৮০ ডিগ্রি ডিগবাজি খেয়ে, নরেন্দ্র মোদি বাক স্বাধীনতার কথা বলেছেন, যে ছবিকে বিজেপি শাসিত রাজ্যে করমুক্ত করা হয়েছে, আসামে সরকারিভাবেই এক বেলার ছুটি দেওয়া হয়েছে, যে ছবি দেখার পর কপালে তিলক, মাথায় ফেট্টি বাঁধা গেরুয়া বা কমলা বাহিনী মুসলমান খেদাও শ্লোগান দিচ্ছে, ঐ হলে বসেই। যে ছবি দেখে অত্যন্ত নিরীহ, সাধারণ শিক্ষিত মানুষও বেরিয়ে এসে বলছে, এবার কাটুয়াদের শিক্ষা দরকার, এক ইউফোরিয়া তৈরি হয়েছে এই ছবিকে ঘিরে, কাল এই ছবি নিয়ে আলোচনা করার সময়ে আমি বলেছিলাম যে এটাই প্রথম নয়, এটা শেষও নয়, এ এক বিরাট পরিকল্পনার অংশ, এক পরিকল্পনা যা সমাজের প্রত্যেক অংশকে, সে আপনি যেই হোন, আপনার রুচি যাই হোক, পেশা যাই হোক, আপনাকে এক বৃত্তের মধ্যে এনে হাজির করবে, সেই বিরাট বৃত্তের নাম হিন্দু, হিন্দুত্ব, হিন্দুরাষ্ট্রের চিন্তা, দর্শন। বাইরে পড়ে থাকবে দেশের ২০% সংখ্যালঘু মানুষ।

কি বলছেন? সব হিন্দু, ঐ বৃত্তে ঢুকবে না? সে তো আর এস এস বিজেপিও জানে, কিন্তু তাদের লক্ষ্য হিন্দু মানুষজনের, হিন্দু ভোটের ৬০/৬৫/৭০% কে ঐ বৃত্তে নিয়ে যাওয়া, থাকনা বাইরে পড়ে কিছু নাস্তিক, কমিউনিস্ট, সেকুলার, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তাদের চাই ঐ ৮০ % হিন্দু ভোটের ৬০/৬৫/৭০%, ভোটের হিসেবে ৪৮/৫২/৫৬% ভোট, তাহলেই তো হয়ে গ্যালো, এক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত।

সেই ভোট পাবার জন্য আর এস এস – বিজেপি কিছু ন্যারেটিভ তৈরি করতে চাইছে, সেগুলোকে সমাজের প্রত্যেকটা স্তরে ছড়িয়ে দিতে চাইছে, আপাতদৃষ্টিতে সেটা একটা বিতর্ক মনে হতে পারে, একটা বিষয়, একটা প্রশ্ন, যার উত্তর হ্যাঁ বা নাতে দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু সে সব আলোচনার শেষে এক মেরুকরণ হবে, হবেই। সেটাই আর এস এস – বিজেপির গেম প্ল্যান। ভেবে দেখুন না, মাস তিন কি চার আগেও দেশের মানুষজন কাশ্মীরের পন্ডিতদের নিয়ে, তাদের পলায়ন, তাদের ওপর অত্যাচার নিয়ে কোনও আলোচনা করছিল? দেশের একজন সুস্থ মানুষও কি কাশ্মীরি পন্ডিতদের ওপরে অত্যাচারকে সমর্থন করে? কিন্তু একটা ছবি এল, তাতে বলা হল যারা লিবারাল, যারা সেকুলার, যারা বামপন্থী, যারা বিজেপি বিরোধী, তারা সবাই এই কাশ্মীরি পন্ডিতদের ওপর অত্যাচারের জন্য দায়ী, এই হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আছে তো কেবল নরেন্দ্র মোদি , আর এস এস আর বিজেপি।

বিজেপির নেতা, সমর্থক, মন্ত্রী, সান্ত্রীরা তো দেখছেনই, দেখছেন বহু সাধারণ মানুষ, দেশজুড়ে এক ন্যারেটিভ ছড়িয়ে পড়ছে, বেশ কিছু মানুষ নতুন করে ঐ বৃত্তের মধ্যে ঢুকে পড়ছেন, মেরুকরণ বাড়ছে। এরকম হাজারটা ঘটনা ঘটছে, কোনও ঘটনাতে প্রচুর মানুষ আলোড়িত হচ্ছে, কোনও ঘটনাতে কম, কিন্তু লক্ষ্য সেই একই।

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: দ্য কাশ্মীর ফাইলস (পর্ব-১)

ডাক্তারবাবুদের পড়াশুনো শেষ হবার পরে একটা শপথ নিতে হয়, সারা পৃথিবীর আলোপ্যাথিক চিকিৎসকরা এই শপথ নিয়ে থাকেন, একে বলে হিপোক্রিটিক ওথ। খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রিটাসের নামে এই শপথে, রোগীর চিকিৎসা, চিকিৎসার গোপনীয়তা, চিকিৎসা পদ্ধতি শেখানো ইত্যাদির শপথ নেওয়া হয়, সারা পৃথিবীতেই এই একই শপথ চালু আছে, আবার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতিও চালু আছে, চীনে আকুপাংচার অনেক অনেক পুরনো, মধ্যপ্রাচ্য থেকে হেকিমির জন্ম, তাও অনেক পুরনো, বিভিন্ন আদিবাসী সমাজে তাদের নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতি চালু আছে, সারা পৃথিবীতে হোমিওপ্যাথি চালু আছে, সেও আর এক বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা, আমাদের দেশেও সেই কোন কাল থেকে আয়ুর্বেদ চালু আছে, তা অনেক ক্ষেত্রে জনপ্রিয়ও বটে।

যে আয়ুর্বেদের জন্ম মহর্ষি চরকের হাত ধরে, প্রায় ১০০/১৫০ খৃষ্টপূর্বাব্দ আগে তাঁর লেখা চরক সংহিতা আজও চর্চার বিষয়, তাঁরও পরে আয়ুর্বেদে ধন্বন্তরী ইত্যাদির নাম শোনা যায়, এসব নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া উচিত, আমাদের দেশের নিজস্ব চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে আরও গবেষণা হোক, এ তো আমরা সব্বাই চাই, কিন্তু বিজেপি আর এস এস এর চিন্তা তো গণস্বাস্থ্য নিয়ে নয়, তাঁদের দরকার হিন্দুরাষ্ট্র, হিন্দুত্ব, কাজেই তাঁরা হিপোক্রাটিক ওথ তুলে দিয়ে এখন থেকে চরক ওথ, ডাক্তার হতে গেলে চরক প্রতিজ্ঞা নিতে হবে বলে ঘোষণা দিলেন, কেবল আয়ুর্বেদের ছাত্রদের?

না তা হলে তো বোঝাই যেত, প্রত্যেক ডাক্তারকে এখন থেকে চরক ওথ নিতে হবে, হবু ডাক্তার, হয়েছেন ডাক্তার, পুরো ডাক্তারি মহল দুভাগে বিভক্ত, কোন এক খ্রিস্টান হিপোক্রেটাসের শপথ নিতে হবে? কেন? আমাদের মহর্ষি চরকের নামে শপথ নেওয়া যাবে না কেন? আরে বাবা অ্যালোপ্যাথি শাস্ত্রে সারা পৃথিবী জুড়ে ডাক্তাররা হিপোক্রাটিক ওথ নেয়, হঠাৎ চরক কেন? দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে? ওষুধ আছে? অক্সিজেন, হাসপাতাল, বিছানা আছে? কী করলে সেগুলো আরও ভালো হবে, বাজেট বরাদ্দ কত টাকা বাড়ানো যায়, এসব নিয়ে নয়, আলোচনা হচ্ছে, মহর্ষি চরকের নামে শপথ হবে না কি হিপোক্রাটিক ওথ নেবে নতুন ডাক্তারবাবুরা?

যারা বিদেশে ডাক্তারি পড়ে আসছেন? যে সমস্ত স্পেশালাইজেশন বিদেশ থেকেই হয়, সেই সব ডাক্তারেরা কোন শপথ নেবেন? আলোপ্যাথি আর আয়ুর্বেদের কি কোনও ফারাক থাকবে না? আর এস এস – বিজেপির নেতারা কি আলোপ্যাথি ওষুধ নেওয়া বন্ধ করে দেবেন? এইমস কি উঠিয়ে দেওয়া হবে? এরকম অজস্র প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা চলবে, আর তার ফাঁকে ছোট্ট হলেও এক নতুন অংশ ঢুকে পড়বে সেই হিন্দু বৃত্তে, সেটাই আর এস এস – বিজেপির পরিকল্পনা, একবারও ভাববেন না ওনারা, চিকিৎসা নিয়ে, সিনেমা নিয়ে, বাক স্বাধীনতা নিয়ে, অন্য কিচ্ছুটি নিয়ে এক ফোঁটাও চিন্তিত, ওনাদের লক্ষ স্থির, এক মধ্যযুগীয় হিন্দুরাষ্ট্র তৈরি করা, জানেন তা সম্ভব নয়, জানেন কোনও দিনও তা হবে না, কিন্তু প্রাণপণে ইতিহাসের চাকা উল্টোদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছেন, প্রতিটা বিষয়ে, সমাজের প্রত্যেক অংশের মধ্যেই নিরবিচ্ছিন্নভাবেই চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে এই প্রচেষ্টা।

জ্যোতিষ শাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান দুটো আলাদা বিষয়। জ্যোতির্বিজ্ঞান বা অ্যাস্ট্রোনমি গ্রহ, উপগ্রহ নক্ষত্র, মহাকাশ ইত্যাদি নিয়ে এক বিরাট বিষয়, বিজ্ঞানের এক বিরাট শাখা। অন্যটা হল জ্যোতিষ শাস্ত্র, যা নাকি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত নয়, বিভিন্ন মতামতে বিভক্ত, অপবিজ্ঞানও বলা যায়, মানুষের ভূত, বর্তমান, ভবিষ্যত আগাম ঘোষণা করতে পারে এমন অবৈজ্ঞানিক দাবিও এই জ্যোতিষ শাস্ত্রে করা হয়, কিন্তু বহু মানুষের বিশ্বাস আছে।

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: কেন চেয়ে আছো গো মা?

রাস্তায় টিঁয়া পাখি নিয়ে বসা জ্যোতিষী, কমপিউটারে ভবিষ্যৎ গণনা করা জ্যোতিষী, মুখ দেখে বলে দিতে পারে, কেউ হাত দেখে কেউ কুষ্টি দেখে, একে ঘিরে বিভিন্ন পাথর, রত্ন, কবজ, তাবিজের বিরাট ব্যবসা ছিল, আছেও। জ্যোতির্বিজ্ঞান পৃথিবীর প্রত্যেক বড় শিক্ষা কেন্দ্রে পড়ানো হয়, এবার ভারতবর্ষে জ্যোতিষ শাস্ত্র পড়ানো শুরু হল, কলেজে, ইউনিভার্সিটিতে। মানে এবার জ্যোতিষীরা ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি নিয়ে মানুষের ভবিষ্যৎ গণনা করবে, সরকারি সার্টিফিকেট নিয়ে মানুষ ঠকানোর কাজ চলবে, এর বিরোধীতা করলেই ভারতবর্ষের প্রাচীন শাস্ত্র, খনা বরাহমিহিরের কথা তোলা হবে, বলা হবে আপনি হিন্দু বিরোধী, এবং এখনও জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিশ্বাস রাখা এক বিরাট সংখ্যক মানুষকে আনা হবে ঐ হিন্দু বৃত্তে, সেটাই আসল পরিকল্পনা, জ্যটিষ শাস্ত্র যদি মানুষের আগাম ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারতো, তাহলে বিজেপির নির্বাচনে এত প্রচার করার তো কোনও প্রয়োজন ছিল না, ইন ফ্যাক্ট দেশে এত টাকা খরচ করে নির্বাচনেরও তো কোনও দরকার ছিল না, একজন জ্যোতিষিই বলে দিতে পারত, কে জিতবে কে হারবে, তেনার গণনা শেষ হলেই মন্ত্রীসভা তৈরি করা যেত, এসব কি বিজেপি জানে না, বিলক্ষণ জানে, কিন্তু তারা এটাও জানে যে, জ্যোতিষ শাস্ত্র ইউনিভার্সিটিতে পড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরেই যুক্তিবাদী, বামপন্থীরা, লিবারাল ডেমোক্রাটিক মানুষজন তার বিরোধিতা করবেন, তখন তাদেরকে হিন্দু বিরোধী বলে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকবে, সেটাই তাঁরা করছেন।

সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে, পলিটেকনিকে সার্কুলার দিয়ে বেদ, উপনিষদ পড়ানোর কথা বলা হয়েছে, কেন? বেদ উপনিষদ দিয়ে কোন ইঞ্জিনিয়ারিং শেখা যাবে? ওনারা এক কল্পিত রাম সেতুর কথা বলবেন, বেদ বা উপনিষদে যার উল্লেখও নেই, কিন্তু এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হলে বলা হবে, বিরোধীরা নাস্তিক, কমিউনিস্ট, হিন্দু বিরোধী। একইভাবে নতুন ইতিহাস গড়ে তোলা হচ্ছে, বিজেপি আর এস এস এর স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাসকে মুছে ফেলার জন্য, স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরই কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে, প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চ শিক্ষা, সর্বত্র এই গৈরিকিকরণের কাজ চলছে।

সেই বিরাট পরিকল্পনারই এক অঙ্গ হল এই দ্য কাশ্মীর ফাইলস, বা আরও অনেক সিনেমা, মগজ ধোলাই যন্ত্রে সেই সিনেমার ব্যবহার নিয়ে লিখব বুধবার। (চলবে)

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
সেরা ১০ | দাদা ইউসুফের জয় নিয়ে আশাবাদী ভাই ইরফান
16:41
Video thumbnail
Sandeshkhali | সাদা কাগজে ধর্ষণ-নালিশ লেখানোর অভিযোগ, সন্দেশখালির BJP নেত্রী পিয়ালি দাসকে তলব
03:29
Video thumbnail
Dev | কেশপুরে খুনের আশঙ্কা! দেবের বিরুদ্ধেই পুলিশে অভিযোগ BJP-র
02:01
Video thumbnail
District Top News | দেখে নিন আজকের জেলার গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি
14:09
Video thumbnail
Sandeshkhali | রাষ্ট্রপতির কাছে সন্দেশখালির মুখেরা বাদ কেন ? প্রশ্ন রেখার
11:04
Video thumbnail
নারদ নারদ (09.05.24) | শাহ-মোদির টার্গেট ৩৫, বিজেপির শীর্ষ নেতাদের কপালে কি চিন্তার ভাঁজ?
17:15
Video thumbnail
Calcutta High Court | 'এরকম অবৈধ নির্মাণ রেখে লাভ কী?' মন্তব্য কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির
04:00
Video thumbnail
Nishith Pramanik | বৃষ্টি মাথায় আরামবাগের BJP প্রার্থী সমর্থনে রোড শো নিশীথ প্রামাণিকের
01:34
Video thumbnail
Berhampur | বহরমপুর থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষকে সরাল কমিশন
02:36
Video thumbnail
Contai TMC | তৃণমূলের কার্যালয় ভাঙার অভিযোগ, কার্যালয় ভাঙার অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে
02:23