নয়াদিল্লি: কংগ্রেসের তরুণ তুর্কি নেতাদের অন্যতম মিলিন্দ দেওরার দলত্যাগের পর রাহুল ব্রিগেডে মাত্র আর একজন লেফটেন্যান্ট পড়ে রইলেন। তিনি শচীন পাইলট। কংগ্রেস পরিবারের সদস্য মিলিন্দ দেওরা রবিবার সকালে বজ্রপাতের মতো ঘোষণা করেন যে, তিনি কংগ্রেস ছাড়ছেন।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠীর শিবসেনায় যোগ দিতে চলেছেন দেওরা। এই ঘটনায় রাহুলের দ্বিতীয় পর্যায়ের ভারত জোড়ো যাত্রা ন্যায়যাত্রা প্রথম কদমেই হোঁচট খেল। কিন্তু, রাহুলের অন্যতম ঘনিষ্ঠদের তালিকায় থাকা গান্ধী পরিবারের অত্যন্ত বিশ্বস্ত মিলিন্দ দেওরা কেন দলত্যাগ করছেন, এই মুখে মুখে জল্পনার সমুদ্র তৈরি করছে।
আরও পড়ুন: পুণ্যের ডুব, রবির সকালে উপচে পড়া ভিড় গঙ্গাসাগরে
২০০৪ সালে রাহুল গান্ধী যখন নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রবেশ করেন, তখন তাঁকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল ‘বাবা ব্রিগেড।’ যে ব্রিগেডে রাহুল-সেনায় ছিলেন রাজেশ পাইলট পুত্র শচীন পাইলট, মাধবরাও সিন্ধিয়ার পুত্র জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, জিতিন প্রসাদ এবং মুরলি দেওরা পুত্র তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী মিলিন্দ দেওরা।
দেওরার কংগ্রেস ত্যাগের ঘোষণা খুব একটা আশ্চর্যজনক নয়। কারণ, দীর্ঘদিন রাহুল-সেবায় নিযুক্ত এই মারাঠি নেতাকে সম্প্রতি সাংগঠনিক পুনর্গঠনে যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছে। রাহুল গান্ধীর বিদেশ কর্মসূচির সঙ্গে অন্তরঙ্গ যোগাযোগ ছিল তাঁর। সেই দেওরা ন্যায়যাত্রার দিন পদত্যাগের ঘোষণা করায় স্বভাবতই বিজেপি হাতের মোয়া পেয়ে গিয়েছে।
বিজেপি নেতা অমিত মালব্য বলেছেন, যাত্রা শুরুর আগে রাহুল গান্ধী আগে নিজের দলের নেতাদের প্রতি ন্যায় করুন। মিলিন্দের আচমকা এই মত পরিবর্তনে অস্বস্তিতে পড়া কংগ্রেসও বিবৃতি দিতে সংযম পালন করছে। কারণ মিলিন্দের মতোই তাঁর বাবা মুরলি দেওরাও ছিলেন গান্ধী পরিবারের অনুগত সৈনিক। দক্ষিণ মুম্বইয়ের মতো অভিজাত এলাকা থেকে দুবারের সাংসদ মিলিন্দকে হারানো কংগ্রেসের পক্ষে লোকসভা ভোটের আগে যথেষ্ট বড় আঘাত।
প্রশ্ন উঠেছে, যে উদ্দীপনায় রাহুল তরুণ তুর্কিদের নিয়ে ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন, সেই দুর্গের তো একে একে নিভিছে দেউটি। তাহলে কি তাঁর দল পরিচালনায় ঘাটতি, অযোগ্যতা ধরা পড়ছে? সরাসরি এই প্রশ্ন দলের ভিতরে কেউ না তুললেও ঠারেঠোরে অনেকেই সেকথা বোঝাতে চাইছেন। সিন্ধিয়া, জিতিন প্রসাদ এবং আরপিএন সিং কংগ্রেস নেতৃত্ব নিয়ে বারবার সমালোচনা করেছেন। রাহুল কাউকে সুযোগ এবং উপরে উঠতে দিতে চান না, এই অভিযোগও উঠেছে।
দেওরার সঙ্গে সম্প্রতি কংগ্রেস নেতৃত্বের মনোমালিন্যের কারণ ছিল ইন্ডিয়া জোটের আসন বণ্টন আলোচনা। উদ্ধব সেনার সঞ্জয় রাউতের কাছে দেশের প্রাচীনতম দলের নতিস্বীকার মেনে নিতে পারেননি মিলিন্দ। দলে কোণঠাসা করে দেওয়া হলেও এটা তাঁর কাছে অপমানের ঠেকেছিল।
ফলে শিন্ডে সেনা তাঁকে লোকসভা টিকিটের দরাদরি করেই তিনি জেনেবুঝে দলত্যাগ করেছেন। দক্ষিণ মুম্বই তাঁদের পরিবারের কাছে হাতের তালুর মতো চেনা। সে কারণে সেখান থেকেই যে তিনি এবার প্রার্থী হতে চলেছেন তার জন্য জ্যোতিষীর প্রয়োজন নেই। আর শেষপর্যন্ত তা যদি না হয়, তাহলে তিনি না ঘরকা, না ঘাটকা হয়ে যাবেন।
অন্য খবর দেখুন