কলকাতা: হাওড়া (Howrah) থেকে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে সোজা বালেশ্বরে চলে গিয়েছিলেন হেলারাম মালিক। শুক্রবার অভিশপ্ত রাতেই দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পর হেলারাম মোবাইলে ছেলের বিশ্বজিতের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিলেন। ২৪ বছরের যুবক বিশ্বজিৎ করমণ্ডল এক্সপ্রেসের (Coromandel Express) যাত্রী ছিলেন। বাবাই বিশ্বজিৎকে ট্রেনে তুলে দিয়ে এসেছিলেন। বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যে হেলারাম করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার (Coromandel Express Accident) খবর পান। তখনই মনে কুডাক ডাকে। ছেলে ফোনে কাতর কণ্ঠে জানান, তিনিও দুর্ঘটনায় পড়েছেন। তারপর থেকে আর ছেলেকে ফোনে পাননি। আর তর সয়নি হেলারামের। রাতেই এক পরিচিতের অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে চলে যান বালেশ্বরে।
বাহানাগায় পৌঁছেই বিভিন্ন হাসপাতালে পাগলের মতো ঘুরে বেড়ান হেলারাম ছেলের খোঁজে। কিন্তু কোনও হাসপাতালেই বিশ্বজিতের খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন, বাহানাগা হাই স্কুলের চত্বরে অস্থায়ী মর্গে প্রচুর দেহ সার দিয়ে রাখা রয়েছে। তখনও হেলারামের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, ছেলের এভাবে মৃত্যু হতে পারে না। বাহানাগা স্কুলে সাদা চাদরে মোড়া মৃতদেহের সারি দেখে শরীর আর সায় দিচ্ছিল না। এর মধ্যেই কোনও একজনের হাত একটু নড়ে ওঠে। হেলারাম চাদর সরিয়ে দেখেন, ছেলে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। ছেলেকে ওই অবস্থায় দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি হেলারাম। স্থানীয়দের সাহায্য নিয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওই অবস্থায় ছেলেকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলেন। সটান চলে যান বালেশ্বর হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁকে কটক হাসপাতালে যেতে বলা হয়। হেলারাম অবশ্য আর কটকমুখো হননি। অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে সোজা চলে আসেন কলকাতার এসএসকএম হাসপাতালে।
এই মুহূর্তে বিশ্বজিৎ কলকাতার সেরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবারই তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। শনিবার ভোর থেকেই হেলারাম এসএসকেএম হাসপাতালে পড়ে আছেন। যেভাবেই হোক সুস্থ করে ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়াই এখন তাঁর একমাত্র কর্তব্য। যেভাবে বাহানাগা হাইস্কুলে অস্থায়ী মর্গে মৃতদেহের সারি থেকে ছেলেকে তুলে এনেছেন, তাতে তাঁর স্থির বিশ্বাস, বিশ্বজিৎ সুস্থ হবেই। শুক্রবারের ওই ভয়ঙ্কর রাতের কথা ভাবলেই এখনও হেলারামের গায়ে কাটা দিচ্ছে। এখন এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরই তাঁর অস্থায়ী ঠিকানা।