দরজা হীন বাড়ি ভাবতে পারেন। হ্যাঁ এমন হয়। বাড়ি আছে নেই দরজা। বিশ্বাসের উপর ভর করে ভারতের এই গ্রামে বছরের পর ধরে বেঁচে আছে মানুষজন। মহারাষ্ট্রের (Maharastra) একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম শনি শিঙ্গনাপুর (Shani Shingnapur Village )। সারা দেশে ব্যতিক্রম মহারাষ্ট্রের একটি গ্রাম। প্রায় ৫ হাজার আখ চাষিদের বসবাস গ্রামে। শুনলে আপনিও অবাক হবেন। গ্রামের বাড়ি গুলোতে কোন দরজাই নেই। বাড়ির এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত দরজা হীন, একেবারে উন্মুক্ত।
মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার একটি গ্রাম। এই গ্রামেরই কোনও বাড়িতে দরজা নেই। শুধু বাড়িতে কেন, এলাকার দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, সরকারি বিল্ডিং, ব্যাঙ্ক— কোথাও কোনও দরজা নেই। গ্রামবাসীরা শনি দেবতাকে এতটাই মানেন যে, গ্রামের পাবলিক টয়লেটেও গোপনীয়তা বজায় রাখতে কোনও দরজা লাগাননি। মহিলাদের জন্য কাপড়ের পর্দা লাগানো থাকে। যাঁদের পর্দা দেওয়া দেখে অন্যেরা বুঝতে পারেন ভিতরে কেউ রয়েছেন। অবাক করা বিষয় এলাকার সব বাড়ি খোলা থাকলেও চুরি হয় না। খোলা থাকলেও টাকা পয়সা, গয়না চুরি হয় না। চোরই যে নেই এই গ্রামে। তাই থানাও নেই। এই গ্রামের রক্ষাকর্তা শনিদেব।
গ্রামের লোকদের বিশ্বাস তাদের শনি দেবতা তাদের দেখভাল করছে। তিনি তাদের টাকা পয়সা, ধন সম্পদ দেখছেন। তাই চুরি হওয়ার কোন ভয় নেই তাদের। কথায় আছে বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। আর সেই বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে শনি দেব।
গ্রামের প্রধানকে স্বপ্ন দিয়েছিলেন স্বয়ং শনি দেবতা। স্বপ্নাদেশে শনি ঠাকুর বলেছিলেন, ‘কোনও বিপদের ভয় নেই এই গ্রামে। আমি তোমাদের রক্ষা করব।’দেবতা নাকি তাঁকে আদেশ দিয়েছিলেন, এই পাথরের মূর্তি এতটাই শক্তিধর যে তাতে কোনও ছাদের তলায় রাখা যাবে না। চারপাশে কোনও দেওয়াল যেন না থাকে যাতে তিনি সারা গ্রামকে বিনা বাধায় চোখের সামনে দেখতে পান।
শিঙ্গনাপুর গ্রামের মানুষেরা জানান, তাদের পূর্বপুরুষেরা ঘরের মধ্যে কোন দরজা বা দরজায় যেন তালা লাগানো না হয়। আর সেই নির্দেশ এখনও তারা মেনে চলেন তারা। শোনা যায় প্রায় ৩০০ বছর ধরে মহারাষ্ট্রের ওই গ্রামে এই নিয়ম চলে আসছে। তবে গ্রামটিতে ইতিমধ্যে শহরের ছোঁয়া লেগেছে।
গ্রামটিতে প্রচলিত আছে আরও একটি কথা। বহু বছর আগে বন্যার সময়ে নদীর জলে গ্রামে ঢুকে যায় আর তাতেই ভেসে আসে একটি শনি দেবতার মূর্তি। এখনও গ্রামের মূল আরাধ্য সেই মূর্তি।
যা কিছু তৈরি হোক না কেন তার কোনও দরজা থাকে না। ২০১১ সালে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক এই গ্রামে তাদের শাখা খোলে। এই ব্যাঙ্ক দরজা লাগিয়েছে যদিও, তবে দরজায় কোনও তালা লাগানো হয় না। এটাই ভারতের প্রথম এবং এখনও একমাত্র লকলেস ব্যাঙ্ক। ২০১৫ সালে প্রথম পুলিশ স্টেশন তৈরি হয় এই গ্রামে। তারও কোনও দরজা নেই। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে জমা পড়েনি।