ভারত-০ শ্রী লঙ্কা–০
ইগর স্টিমাচকে দেখলে সত্যিই খুব খারাপ লাগে। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে ১৯৯৮ সালে বিশ্ব কাপ সেমিফাইনাল খেলেছেন। খেলতেন সেন্ট্রাল ব্যাকে। তার পর সেই দেশকে ২০১৮ সালে বিশ্ব কাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ডে কোচিং করিয়েছেন। সে বছর ক্রোয়েশিয়া বিশ্ব কাপে রানার্স হয়েছিল। এই যাঁর ক্যারিয়র তিনি এখন ভারতের চিফ কোচ। সাফ কাপের মতো খুবই নীচু মানের টুর্নামেন্টে তাঁর দল পর পর দুটো ম্যাচে জিততে পারল না। আগের দিন তবু বাংলাদেশের জালে একটা বল ঢুকিয়েছিল ভারত। এদিন তাও পারল না। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের কথা মাথায় না রেখেও বলা যায়, পাঁচ দেশের টুর্নামেন্টে শ্রী লঙ্কা সবার পিছনেই থাকবে। প্রথম দুটি ম্যাচেই হেরে গেছে তারা। সেই টিমই কি না ভারতের মতো সাতবারের চ্যাম্পিয়নকে গোল করতে দিল না। এ সব দেখতে দেখতে মাথা গরম হয়ে যেতে বাধ্য। স্টিমাচেরও হল। অযথা রেফারির সঙ্গে তর্ক করতে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখলেন। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার মালদ্বীপে দিনটা খুবই খারাপ গেল স্টিমাচের।
সাফ কাপ এবার পাঁচ দলের। রাউন্ড রবিন লিগের প্রথম দুটি দল ফাইনাল খেলবে ১৬ অক্টোবর। ভারত দুই ম্যাচ খেলে মাত্র দু পয়েন্ট পেয়েছে। তাদের এখন খেলা বাকি নেপাল (১০ অক্টোবর) এবং মালদ্বীপের (১৩ অক্টোবর) সঙ্গে। সেই বিচারে নেপাল ম্যাচটাই ভারতের ডু অর ডাই ম্যাচ। সেদিন জিততে না পারলে ভারতের পক্ষে ফাইনালে যাওয়া মুশকিল। তবে সে সব কথা পরে। এদিন ভারত কিন্তু জেতার মতোই খেলেছিল। অগুন্তি গোলের সুযোগ তৈরি করেছে তারা। বিচ্ছিন্নভাবে শ্রী লঙ্কা কয়েকটি আক্রমণ করেছিল বটে। কিন্তু সেগুলো এতই নির্বিষ এবং পরিকল্পনাহীন যে গুরপ্রীত সান্ধুকে সেভাবে কোনও কঠিন বলই ধরতে হয়নি। ভারত যা খেলেছে তাতে গোলের মালা পরতে পারত শ্রী লঙ্কা। কিন্তু সেটা হল না দ্বীপরাষ্ট্রের গোলকিপার সুজন খুবই ভাল খেলায়। জমিতে কিংবা শূণ্যে বার বার তিনি ভারতের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছেন। তবে অন্তত দুটো ঘটনায় তাঁকে অসহায় পেয়েও গোল করতে পারেনি ভারত। প্রথমার্দ্ধের ২২ মিনিটে ডান দিক থেকে উদান্তের সেন্টার যখন বক্সের মাঝখানে লিস্টন কোলাসো ধরলেন তখন তাঁর সামনে শুধু সুজন। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে মারতে গিয়ে বলটা আকাশে উড়িয়ে দিলেন এটিকে মোহনবাগান ফরোয়ার্ড। আর তাঁর ক্লাব সতীর্থ শুভাশিস বসু যা করলেন তাতে লজ্জার একশেষ। ম্যাচ শেষ হতে তখন মিনিট দুয়েক বাকি। ইয়াসিরের কর্নার থেকে এ মাথা, সে মাথা হয়ে বল যখন ভারতের লেফট ব্যাকের কাছে এল, তখন তিনি গোল লাইন থেকে তিন গজ দূরে। ফাঁকা গোল। কিন্তু শুভাশিস সেখান থেকেই বলটা উড়িয়ে দিলেন। এই সব গোল মিস করা শুধু অপরাধ নয়, মহাঅপরাধ।
আগের দিনের টিম থেকে অনেক পরিবর্তন করেছিলেন স্টিমাচ। ডিফেন্সে প্রীতম কোটাল ও চিঙ্গলসানাকে বসিয়ে নামানো হয় সেরিটন ফার্নান্ডেজ ও মন্দার রাও দেশাইকে। শ্রী লঙ্কার আক্রমণ বলে তেমন কিছু ছিল না। যা ছিল তা আটকাবার পক্ষে রাহুল বেকে-মন্দার-সেরিটন-শুভাশিসের ডিফেন্স ছিল যথেষ্ট। মাঝ মাঠে উদান্ত-গ্লেন মার্টিন্স-অনিরুদ্ধ থাপার সঙ্গে নামানো হয় সুরেশ সিংকে। তবে মণিপুরের সুরেশ তেমন সুবিধে করতে পারেননি। ফরোয়ার্ডে সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে লিস্টন কোলাসো। বাদ পড়েন মনবীর। এদিন গোল করতে পারলে সুনীল ধরে ফেলতে পারতেন পেলেকে। তাঁর গোল সংখ্যা এখন ৭৬, পেলে তাঁর থেকে এক গোল এগিয়ে। কিন্তু সুনীলের বয়স হয়েছে। তাঁর সেই গোলক্ষুধা হয়তো আছে। কিন্তু যেটা নেই তা হল মবিলিটি এবং পেনিট্রেশন। আগের দিন উদান্ত সিং তাঁকে প্লেটে করে বল সাজিয়ে দিয়েছিলেন। এদিন অবশ্য সে রকম বল তিনি পাননি। আসলে ভারতের এই টিমটা তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে গড়া। এদের বেশির ভাগেরই অভিজ্ঞতা কম। তাই শ্রী লঙ্কার অখ্যাত-অজ্ঞাত ডিফেন্ডার ও মিডফিল্ডাররা তাদের আটকে দিল। বিরতির পর গুচ্ছের পরিবর্ত নামিয়েও কোনও সুরাহা হল না। আর শুভাশিসের মতো মিস হলে সুরাহা হবে কী করে?
এই প্রেক্ষিতে ভারতের পরের দুটি ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নেপাল খুবই ভাল খেলছে। প্রথম দুটি ম্যাচেই তারা জিতেছে। সেখানে ভারত প্রথম দুটি ম্যাচে ড্র করতে পারল। স্টিমাচের ছেলেদের বাকি দুটো ম্যাচে জিততেই হবে। এখন তিনি কীভাবে ছেলেদের মোটিভেট করেন তাই এখন দেখার।