রাঁচি: ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে আজ ‘মহানাট্যমেলা’। গত এক সপ্তাহের টানাপড়েনের পর আজ, সোমবার বেলা ১১টায় ঘটতে চলেছে সরকার বাঁচানোর পালার পর্দা-পতন। এদিন বিধানসভায় নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেবেন।
সেই লক্ষ্যে গতকাল, রবিবার সন্ধ্যায় কংগ্রেসের ডেরা হায়দরাবাদের রিসর্ট থেকে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, কংগ্রেস এবং আরজেডি জোটের বিধায়করা রাঁচিতে এসে পৌঁছে গিয়েছেন। সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ইডির হেফাজতে থাকা জেএমএম প্রধান হেমন্ত সোরেনও বিধানসভায় আস্থা ভোটে যোগ দিতে আসবেন। সব মিলিয়ে হাড়কাঁপানো শীতের রাজধানীতে বসন্তের ফুল কার কপালে ফুটবে তা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নিশ্চিত হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: H.S. এর প্রশ্নপত্রে এবার ইউনিক সিরিয়াল নম্বর
সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের বিষয়ে জেএমএম পুরোপুরি বিশ্বাস রাখলেও বিজেপি নেতৃত্ব বলে চলেছে, খেল আভি বাকি হ্যায়। যদিও সেটা অস্তিত্ব রক্ষার দাবি বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, ৮১ সদস্যবিশিষ্ট বিধানসভায় চম্পাই সোরেনের দাবি অনুযায়ী ৪৩ জন বিধায়কের সমর্থন আছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটে রয়েছেন ২৯ জন। বিজেপি সূত্র জানিয়েছে, চম্পাইয়ের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে যাঁদের আপত্তি ছিল, তাঁরা আজ সভায় আসবেন না। জেএমএমের বিধায়ক মিথিলেশ ঠাকুর গতকাল রাঁচিতে ফিরে বলেন, কিছু বিজেপি বিধায়কও মহাগাঁটবন্ধনকে সমর্থন করবেন।
অন্যদিকে, বিজেপির মুখপাত্র প্রতুল শাহ দেও বলেন, বিধানসভায় যে ফলাফলই হোক না কেন, ঝাড়খণ্ড হেরে গিয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হেমন্ত সোরেনের মতো মুখ্যমন্ত্রী গোটা রাজ্যের মুখ পুড়িয়েছেন। বিজেপির মুখ্য সচেতক বিরাঞ্চি নারায়ণ বলেছেন, জেএমএম নেতৃত্বাধীন জোট আস্থা ভোটে হারতে চলেছে। হায়দরাবাদে বিধায়কদের নিয়ে গিয়ে রাখার অর্থই হচ্ছে, দলের নেতাদের উপরই ভরসা নেই।
প্রাচীন প্রবাদ যে, ঠোঁট ও পেয়ালার মধ্যে অনেক দূরত্ব থাকে। যতক্ষণ না কাপটি ঠোঁট স্পর্শ করছে, ততক্ষণ বলা যায় না চা খেলাম। সেই অবস্থাই এখন ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে। কারণ, কিছুক্ষণের মধ্যে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নতুন মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেনকে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে।
তার আগে রবিবার সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা জেএমএমের সর্বময় কর্তা হেমন্ত সোরেনকে বাঁকা কথায় বেঁধেন দলেরই এক আদিবাসী বিধায়ক। অন্যদিকে, আর এক আদিবাসী বিধায়কও লাপাতা। গত তিনদিন ধরে তাঁর খোঁজ মিলছে না, যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে জেএমএম।
রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণনের সামনে ৪৭ জন বিধায়কের সমর্থন আছে বলে দাবি করেছিলেন চম্পাই। শুক্রবার শপথ গ্রহণের পরপরই তার মধ্যে ৩৯ জনকে নিয়ে কংগ্রেস শাসিত তেলঙ্গানার হায়দরাবাদের উপকণ্ঠ শামিরপেটের একটি রিসর্টে ‘নজরবন্দি’ করে রাখা হয়। ইডলি-ধোসা, কফি আর হায়দরাবাদি বিরিয়ানিতে দুদিন মশগুল থাকার পর রবিবার রাতের মধ্যে তাঁরা রাঁচি ফিরে আসেন।
এর মধ্যেই বাগড়া দেখা দিয়েছে জেএমএমের বর্ষীয়ান নেতা লোবিন হেমব্রমের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যে। সাহিবগঞ্জ জেলার বোরিও বিধানসভা কেন্দ্রের সদস্য লোবিন বলেন, আমার পরামর্শ না শোনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে আজ জেলের মুখ দেখতে হয়েছে। ২০১৯ সালের ভোট ইস্তাহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করা হয়নি। যার ফলে রাজ্যের আদিবাসী সমাজের মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন। এর পিছনে বিহারিদের হাত রয়েছে বলেও বেসুরো কথা বলেছেন তিনি।
তাঁর অভিযোগ ঝাড়খণ্ডে সরকারে থাকে আদিবাসীরা, কিন্তু সরকার পরিচালনা করে অনাদিবাসীরা। আমাদের দলের লক্ষ্য ছিল আদিবাসী স্বার্থ রক্ষা। কিন্তু বাঁধ, সড়ক, শিল্প এবং বিমানবন্দর তৈরির নামে এক এক করে আদিবাসীদের জমিই হাতানো হয়েছে। এখন লোকে আমাদের বিশ্বাসঘাতক বলছে।
ছামরা লিন্ডা নামে আরেক বিধায়ক দুদিন ধরেই বেপাত্তা। আগের দিন দলের বৈঠকেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। যদিও দলের সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, হেমব্রম এবং লিন্ডা দুজনেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের বিশেষ সভায় হাজির থাকবেন। চিন্তার কিছু নেই।
অন্য খবর দেখুন