কলকাতা: ভারতীয় রেল (Indian Railway) দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। প্রতিদিনই দেশের কোটি কোটি মানুষ কর্মসূত্রে বা অন্য কাজে এই রেল (Indian Railway) পরিবহন ব্যবস্থার উপরেই আস্থা রাখেন। এদেশে রেলগাড়ি চালু হয়েছিল ব্রিটিশদের হাত ধরে। বর্তমানে আমাদের দেশে ছোট বড় মিলিয়ে মোট ৮,৫০০ রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে অনেক স্টেশনরই রয়েছে নিজস্ব কিছু গল্প। যেমন ধরুন ভারতের শেষতম রেলওয়ে স্টেশনটির (Rail Station) নাম সিঙ্গাবাদ (Singhabad)। মালদহের হাবিবপুরে অবস্থিত সিঙ্গাবাদ স্টেশনটি দেশের প্রাচীনতম এবং শেষ রেলস্টেশনের তকমা পেয়েছে। কিন্তু জানেন কী, এই স্টেশন থেকে পায়ে হেটেই বিদেশ যাওয়া যায়।
সিঙ্গাবাদ স্টেশনটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত। সিঙ্গাবাদ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই রয়েছে বাংলাদেশ। চাইলে পায়ে হেঁটেই পৌঁছে যাওয়া যায় ওপার বাংলায়। জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ ছিল এই স্টেশন। স্বাধীনতার পর ভারত-পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাওয়ার ফলে এই সিঙ্গাবাদ রেল স্টেশনটি কার্যত জনশূন্য হয়ে পড়ে। তারপর ১৯৭৮ সাল নাগাদ এই রুটে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এই সব গাড়ি ভারত থেকে বাংলাদেশে যাতায়াত করত। ২০১১ সালের নভেম্বরে পুরনো চুক্তি সংশোধন করা হয়েছিল এবং নেপালকে তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এখন নেপালগামী ট্রেনও এখান থেকে যেতে শুরু করেছে। পণ্যবাহী ট্রেনের চালান আসে রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে। বাংলাদেশের প্রথম স্টেশনটির নাম হল রোহনপুর।
সিঙ্গাবাদ স্টেশনটি দেখে মনে হবে যেন ঔপনিবেশিক আমলে ফিরে গিয়েছেন। এখানকার সব কিছুই ব্রিটিশ আমলের। সিগন্যাল থেকে শুরু করে যোগাযোগ এবং স্টেশন সম্পর্কিত সরঞ্জাম সব কিছুতেই যেন ব্রিটিশ সময়ের গন্ধ লেগে রয়েছে। এখানে আজও কার্ড বোর্ডের টিকিট রয়েছে। যা এখন দেশের কোথাও মিলবে না। স্টেশনে একটি পুরনো টেলিফোনও রয়েছে। সিগন্যালের জন্য পুরোনো নিয়মে হ্যান্ড গিয়ার ব্যবহার করা হয় এই সিঙ্গাবাদ স্টেশনে। বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকজন কর্মচারী এখানে কাজ করেন।
সিঙ্গাবাদ স্টেশনের নামের বোর্ডে ‘ভারতের শেষ স্টেশন’ কথাটি লেখা আছে। অতীতেও সিঙ্গাবাদ স্টেশনটি মূলত কলকাতা এবং ঢাকার মধ্যে ট্রেন সংযোগের জন্য ব্যবহৃত হত। যেহেতু এই স্টেশনটি প্রাক স্বাধীনতার সময়কার, তাই মহাত্মা গান্ধি এবং সুভাষচন্দ্র বসুও ঢাকায় যাওয়ার জন্য এই পথটি বেশ কয়েক বার ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু আজ এটি শুধুমাত্র পণ্য ট্রেনের পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। একটা সময় ছিল যখন দার্জিলিং মেইলের মতো ট্রেনও এখান দিয়ে যাতায়াত করত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সেই রকম নেই। এখন শুধু পণ্যবাহী ট্রেনই এখান দিয়ে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়া নেপালগামী পণ্যবাহী ট্রেনও এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করে। সেই ট্রেন একাধিকবার থামে এবং সিগন্যালে অপেক্ষা করে। কিন্তু যাত্রীর জন্য কোনও ট্রেন থামে না। যদিও এখানকার মানুষ এখনও স্টেশনে ট্রেন থামার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন।