Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: হীরক রাজা বুদ্ধিমান করো সবে তাঁর জয়গান

চতুর্থ স্তম্ভ: হীরক রাজা বুদ্ধিমান করো সবে তাঁর জয়গান

Follow Us :

‘অনাহারে নাহি খেদ বেশি খেলে বাড়ে মেদ,
ভরপেট নাও খাই, রাজকর দেওয়া চাই
লেখাপড়া করে যেই অনাহারে মরে সেই
জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই
বিদ্যালাভে লোকসান- নাই অর্থ, নাই মান
হীরক রাজা বুদ্ধিমান করো সবে তার জয়গান’

মগজ ধোলাই যন্ত্র, মনে আছে সব্বার, আজ আমাদের দেশজুড়ে সেই জয়গান চলছে, সর্বত্র, কে করছে জয়গান? কেন রাজা নিজেই, তিনি ঢেড়া পেটানোর লোকজন জোগাড় করেছেন, ভাড়ায় এনেছেন, রাজকোষ থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ পয়সা দেওয়া হচ্ছে, সেই পয়সায় পুষ্ট সংবাদ মাধ্যম জয়গান করেই চলেছে, নন স্টপ জয়গান, টোয়েন্টি ফোর ইন্টু সেভেন। মোদিজী ক্ষমতায় এসেছিলেন ২০১৪ সালে, তো এক ভদ্রলোক, অজিত গলগলি, মুম্বইতে থাকেন, রাইট টু ইনফর্মেশন অ্যাক্টের সাহায্য নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, ধর্মাবতার, এই মোদি সরকার ২০১৮ সাল অবদি বিজ্ঞাপন বাবদ কত টাকা খরচ করেছে? উত্তর এসেছে, ৪৩৪৩ কোটি টাকা৷ হ্যাঁ প্রিন্ট, ডিজিটাল আর নিউজ পেপারে এই পরিমাণ টাকা বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ওই ঢেঁড়া পেটানোর জন্য সরকারি বড় বড় অনুষ্ঠানের খরচ ধরা নেই, বিজেপি দল হিসেবে যা প্রচার করছে, স্বাভাবিকভাবেই সে খরচও ধরা নেই। সেই একই অজিত গলগলি ২০১৯ সালে আবার একই প্রশ্ন করলেন, তাতে করে জানা গেল ২০১৭ – ২০১৯ সালে সরকার বিজ্ঞাপন বাবদ খরচ করেছেন ৩৭৬৭ কোটি টাকা।

এবারে এগিয়ে এলেন যতীন দেশাই, তিনি আরটিআই করে যা পেলেন তা হল ২০১৯ থেকে ২০২০ আর্থিক বছরে ৭১৩ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে, মানে প্রতিদিন ১.৯৫ কোটি টাকা প্রতিদিন খরচ করা হয়েছে বিজ্ঞাপন বাবদ। এগুলোর বাইরে আছে সরকারি অনুষ্ঠান, বিভিন্ন রাজ্য সরকারের বিজ্ঞাপন, দলীয় কর্মসূচি ইত্যাদি। তো এসব কি আগে ছিল না? ছিল, নিশ্চয়ই ছিল, তবে আড়ে বহরে অনেক অনেক কম। মিডিয়া কি তেল দিত না? যাকে বলে বাটারিং? দিত। কিন্তু এমন নির্লজ্জভাবে সরকারের প্রচারে, এক এবং একমাত্র নরেন্দ্র মোদির প্রচারে, এইরকম নগ্নভাবে মিডিয়াকে নেমে পড়তে দেখা যায়নি। রিপাবলিক নামে এক বাজনদার তো সব রেকর্ড ম্লান করে দিয়েছে, সন্ধ্যে হলেই আসুরিক গর্জনে ভরিয়ে দিচ্ছে আকাশ বাতাস। এইরকম কিছু টেলিভিশন চ্যানেল আজও, আজও রাহুল গান্ধী আর মনমোহন সিংকেই প্রশ্ন করেই যাচ্ছে, জবাব দো রাহুল গান্ধী, প্রতিদিন। রিপাবলিক আবার কেবল রাহুল নয়, ইন্দিরা গান্ধী, জহরলাল নেহরুরকেও প্রশ্ন করছে জবাব চাইছে।

এই তামাশা আমরা দেখছি, ডিমনিটাইজেশনের সময়ে এই রকমই এক চ্যানেলের অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছিল, নতুন দু হাজার নোটে নাকি মাইক্রো চিপ আছে, জমা করে ফেলে রাখলেই বের করে নেওয়া যাবে, সিরিয়াস আলোচনা, শুনে হাসবো না কাঁদব ভেবে উঠতে পারিনি। এর পাশাপাশি আরএসএস–বিজেপি জোর দিয়েছিল সিনেমায়, তারা জানে ক্রিকেট আর সিনেমা এই দুটো হল ভারতীয়দের সবচেয়ে দূর্বল জায়গা, এইখানে ঘা দিতে হবে। শুরু হল সেই কাজ, তিন ধরনের সিনেমা, প্রথমটা হল ঐতিহাসিক, হিন্দু রাজা আর অত্যাচারী মুসলমান শাসকের গল্প, বুঝিয়ে দাও হিন্দুদের ওপর কত অত্যাচার করা হয়েছে, তাহলে আজ উলটোটা করার হক জন্মাবে। হিন্দুত্বকে সামনে রেখে মধ্যযুগীয় রাজা রাজড়াদের নিয়ে সিনেমা উগরে দিতে থাকল মুসলমান বিদ্বেষের বিষ।

দ্বিতীয়টা হল এক্কেবারে আরএসএস–হিন্দু মহাসভা-বিজেপির এজেন্ডা, ৪৭ থেকে দেশের কিচ্ছু হয়নি৷ কোনও কাজ হয়নি৷ উন্নয়ন হয়নি, পাকিস্তানের কাছে মাথা নত করেছে সরকার, এসবই হল কংগ্রেসের চরিত্র, গান্ধী–নেহরু মিলে সুভাষকে দেশ ছাড়া করেছে, লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে খুন করা হয়েছে, পটেল আর নেহরুর ঝগড়া ছিল, নেহরুর জন্যই কাশ্মীর সমস্যা তৈরি হয়েছে, কাশ্মীরে হিন্দু পন্ডিতদের পাশে দাঁড়ায়নি সরকার, তাই কাশ্মীর ফাইলস তৈরি হল, তাসখন ফাইলস বা গুমনামির মত সিনেমা তৈরি হল৷ এক তরফা মিথ্যে, মিথ্যের পাহাড়, কিন্তু সত্যি আর মিথ্যের মিশেল দিয়ে এক ঝাঁঝালো ককটেল, যা দেখে মানুষ বুঝল, এতদিন তো দেশে কোনও সরকারই ছিল না৷ এই প্রথম এক জাতীয়তাবাদী, দেশপ্রেমিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে, যারা মুসলয়ানদের সবক শেখাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

তৃতীয়টা হল এই মোদি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প আর সিদ্ধান্তের পিছনে যে কি অসীম দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদ লুকিয়ে আছে, সেটা তুলে ধরার জন্য সিনেমা, ওটিটি সিরিজ, খুল্লম খুল্লা মিথ্যে, ডাহা মিথ্যে এনে হাজির করা হচ্ছে মানুষের সামনে। তার একটা এই ইদানিং দেখলাম, সেটা নিয়ে দুটো কথা বলা দরকার, হিন্দি ওটিটি সিরিজ, দমবন্ধ করা উত্তেজনা, পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র, আর ভারতের কড়ারা জবাব। গল্প শুরু হচ্ছে, মূল চরিত্র বাঙালি, তিনি একাধারে ইনকাম ট্যাক্স অফিসার, অন্যধারে সৈন্যবাহিনীর মেজর, পিস্তল থেকে এ কে ফর্টি সেভেন, হ্যান্ড কমব্যাট সবই জানেন, আল্লায় জানে এরকম সত্যিই আছে কি না৷ সেই চরিত্রের অভিনেতা আবার বামপন্থী পরিবারের, তাতে কী? টাকা পেলে মুখে রঙ মেখে নেতাজী উন্মাদ ছিলেন একথাও বলা যায়, এ তো সামান্য ব্যাপার। তো সেই চরিত্র ধরে ফেলছে রাশি রাশি জাল নোট। তারপর পেঁয়াজের খোলার মত পাকিস্তানের চক্রান্ত বেরিয়ে আসছে, তিনি একবার ইনকাম ট্যাক্সের দফতর, পরক্ষণেই কাশ্মীর, কখন যে কোথায় আছেন বোঝার আগেই জানা গেল, আর আরডিএক্স নয়, এ কে ফর্টি সেভেন নয়, এবার ভারতবর্ষকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে৷

সিরিজে আমাদের ন্যাশন্যাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার অজিত দোভাল টাইপের এক চরিত্র আছে, পি এম ও র একটু স্কেপটিক্যাল এক চরিত্র আছে, আর আছেন প্রধানমন্ত্রী, না অন্য কোনও মন্ত্রী নেই, থাকার কথাও নয়, একমাত্র প্রধানমন্ত্রী, হুবহু মোদিজী, দাড়ি থেকে পোশাক এবং অসম্ভব প্রাগম্যাটিক, আগে কেউ যা করেননি, উনি তাই করছেন, এই ওটিটি সিরিজের সিজন ওয়ানে ঘর এ ঘুস কর মারেঙ্গে, দেখানো হয়েছে, নাকি দেশের প্রথম কোভার্ট অপারেশন, সার্জিকাল স্ট্রাইক, সেখানেও তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি এই বোল্ড ডিসিসন নিচ্ছেন, জওয়ানদের স্যালুট করছেন, দ্বিতীয় এপিসোডেও তাই, স্পেশাল ফোর্স এর সঙ্গে কথা বলছেন, বোঝার চেষ্টা করছেন, ওদিকে পাক চক্রান্ত পৌঁছে গিয়েছে তামিল গেরিলাদের কাছে, উত্তর পূর্বাঞ্চলের মিজো–নাগা বিদ্রোহীদের কাছে, অন্ধ্রে মাওবাদীদের কাছে, স্পেশাল ফোর্স বুঝে ফেলেছে কোটি কোটি জাল টাকা ঢুকিয়ে অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়ার চক্রান্ত, কিন্তু তারা অসহায়, করবে টা কী?

এই সময়ে সেই দাড়িওলা প্রধানমন্ত্রী সবাইকে চমকে দিয়ে নোটবন্দি করে দিলেন৷ মাস্টার স্ট্রোক, হোক না একটু অসুবিধে, নাই বা রেডি থাক এটিএম ব্যবস্থা, গোপন পাক চক্রান্তকে রুখতেই এই নোটবন্দি আনা হয়েছিল৷ হুঁ হুঁ বাওয়া, এটাই ছিল আসল কারণ, ওটিটি শেষ হলে এটাই মেসেজ, এটাই বক্তব্য। এটা দেখার পরে লোকে বলবে, ও তাই? ওটা ছিল পাক চক্রান্ত রুখতে এক মাস্টার স্ট্রোক, আর বিরোধীরা এই রকম প্রাজ্ঞ প্রধানমন্ত্রীকে কিই না বলেছে। আসলে সেই ৮ নভেম্বর ২০১৬ র রাতে মোদিজী নোটবন্দির ঘোষণা করেছিলেন, এক অশিক্ষিত অর্বাচীন সিদ্ধান্ত, বলেছিলেন, এর ফলে কালো টাকা হু হু করে বেরিয়ে আসবে, ভেবেওছিলেন, তারপর অবশ্য নতুন নতুন কারণ বলা শুরু হল, বলা হল উগ্রপন্থাকে আটকাতে এই নোটবন্দি, তাদের হাতে জাল ভারতীয় টাকা দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে, এই নোটবন্দি তাকে রুখবে।

কিছুদিন পরে বলা হল, নোটবন্দির ফলে ডিজিটাল মানি সার্কুলেশন বাড়বে, বাজারে ক্যাশ কমবে। কিছুদিন পরে বোঝা গেল কালো টাকার সবটাই ফেরত চলে এসেছে, ৯৯.৭% টাকা ফেরত এসেছে, জাল নোট বছর খানিকের মধ্যেই যে জায়গায় ছিল সেই জায়গায় চলে গেল, আজও বাজারে ক্যাশ লেনদেন চলছে, একইভাবেই চলছে। এবং প্রধানমন্ত্রী চুপ, সাংবাদিক তো ছেড়েই দিন, সাংবাদিকের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছে বা সাহস তাঁর নেই, তাহলে? তাহলে সিনেমা হোক, ওটিটি সিরিজ হোক, সেখান থেকেই মানুষ জানুক ৮ নভেম্বার আমাদের মোদিজী আসলে এক মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছিলেন, আমরা নাদান, অর্থনীতিবিদরা শিশু, তারপর থেকে লাগাতার নামতে থাকা জিডিপি, পার ক্যাপিটা ইনকামও আসলে ওই মাস্টার স্ট্রোকেরই অঙ্গ। সাধারণ মানুষের বয়েই গিয়েছে অর্থনীতিবিদদের কচকচানি শুনতে, দিনান্তের পরিশ্রমের পরে পর্দায় সিনেমা বা টেলিভিশনে ওটিটি চ্যানেল খুলবেন, দেখবেন দেশে এক মহামানবের জন্ম হয়েছে, তিনি যা করছেন সব ঠিক, যা করছেন সবই দেশের জন্য, যা করছেন সবটাই মাস্টার স্ট্রোক, জয়ধ্বনী দেবেন, গুমনামী বাবা দেখে শিহরিত হবেন, দাঁড়িয়ে পড়বেন, কাশ্মীর ফাইলস দেখে রাগে গা কির কির করবে, আহারে হিন্দুদের ওপর কী অত্যাচার, হিন্দু খতরে এ হ্যায়, তাসখন্দ ফাইল দেখে বুঝে ফেলবেন, ইন্দিরাকে আনার জন্য, লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে খুন করা হয়েছিল। আমার খালি ভয় হয় এসব দেখত দেখতে কবে হয় তো আমার সহনাগরিক বলেই ফেলবেন হেইল হিটলার।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Lok Sabha Election | সোমে বাংলার ৮ কেন্দ্রে ভোট, দিলীপ-অধীর-মহুয়াদের ভাগ্য নির্ধারণ
02:35
Video thumbnail
Lok Sabha Election 2024 | আগামীকাল চতুর্থ দফার ভোট, ৫ জেলার ৮ কেন্দ্রে নির্বাচন
03:43
Video thumbnail
Lok Sabha Election | সোমবার চতুর্থ দফার ভোট, শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত ব্যস্ততা
07:49
Video thumbnail
Lok Sabha Election | বাংলার ৮ কেন্দ্রে নির্বাচন, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোট কাল
10:16
Video thumbnail
Lok Sabha Election | EVM, সরঞ্জাম নিয়ে বুথমুখী ভোটকর্মীরা
04:11
Video thumbnail
Lok Sabha Election | সোমবার চতুর্থ দফার ভোট, শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত ব্যস্ততা
10:42
Video thumbnail
Lok Sabha Election 2024 | কৃষ্ণনগরের মডেল বুথ জলঙ্গি ভবন, ভোটারদের জন্য থাকছে পুরস্কার জেতার সুযোগ
02:52
Video thumbnail
Lok Sabha Election | বাংলার ৮টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট, ইভিএম নিয়ে বুথমুখী ভোটকর্মীরা
08:01
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধে রণহুঙ্কার | রাজ্যে বড় দুর্নীতি করছে TMC :নরেন্দ্র মোদি
05:43
Video thumbnail
Lok Sabha Election | সোমবার চতুর্থ দফার ভোট, শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত ব্যস্ততা
04:05