Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ : ডিমনিটাইজেশনের পাঁচ বছর

চতুর্থ স্তম্ভ : ডিমনিটাইজেশনের পাঁচ বছর

Follow Us :

পাঁচ বছর আগে এক সন্ধ্যেয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন মিত্রোঁ, তারপর থেকে পৃথিবীর মধুরতম সম্পর্ক মিত্রতার এই মিত্রোঁ সম্বোধন, মানুষের পিলে কাঁপিয়ে দেয়। সকাল থেকে মানুষ ভয়ে ভয়ে থাকে, দেশের প্রধান সেবক আবার সন্ধ্যেয় মিত্রোঁ বলে, মানুষকে আবার পথে বসাবেনা তো?

সেদিন তিনি বলেছিলেন, ইয়হ এক মহাযজ্ঞ হ্যায়। সাধারণ মানুষের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, রোজগার সেই মহাযজ্ঞে আহুতি দেওয়া হবে, তা কিন্তু তখন বলেননি। বলেছিলেন, ইয়হ ইমানদারি কা উৎসব হ্যায়, সততার উৎসব। বলেছিলেন প্রামানিকতা কা পরব হ্যায়, স্বচ্ছ প্রশাসন, ওই এল বলে। এসব বলার সঙ্গে সঙ্গে আঁতকে উঠেছিলেন, বিখ্যাত অর্থনীতিবিদরা, থমকে দাঁড়িয়েছিল রাজনৈতিক নেতারা, তারা বুঝেই উঠতে পারছিল না, এর ফলে কী হতে পারে, খবরের কাগজ খুলে দেখুন, যাঁর ইংরিজি উচ্চারণ নিয়ে এত হাসাহাসি, যিনি প্রেসিডেন্সিতে পড়াশুনো করেননি, সেই মমতা ব্যানার্জি প্রথম দিনেই তীব্র সমালোচনা করেছিলেন, একই সমালোচনা শোনা গিয়েছিল অমর্ত সেন, রঘুরাম রাজনের মুখে, অভিজিত বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন, অর্থনীতি ধাক্কা খাবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র ভাই দামোদরদাস মোদি তো হার্ড ওয়ার্কে বিশ্বাস করেন, কাজেই হাভার্ড ফেরত লোকজন কী বলল তাতে কী এসে যায়, তিনি জানিয়ে দিলেন, আজ সে পাঁচশো আউর হজার রুপিয়া কা নোট সিরফ কাগজ কা টুকরা বন গয়া, অব কালা ধন খতম, কালা ধন রখনে বালোঁ, সামনে দেখো মোদি হ্যায়। সেদিন রাতের ভাষণে আমরা ওই ডিজিটাল ইন্ডিয়া ইত্যাদির বাওয়াল শুনিনি, একটা কথাও নয়। দুটো মোদ্দা কথা বলেছিলেন মোদিজী, এক, কালা ধন, ব্ল্যাক মনি পচে পড়ে থাকবে। দুই, নকল টাকা যারা ছাপায়, সেই বিদেশী চক্রান্ত, সেই উগ্রপন্থা এবার টাকার অভাবে শুকিয়ে মরবে, ভক্তরা শুনে হাততালি দিয়েছিল, তারাও জানত না, তার পরের দিন থেকে তাদের ঘরেও চুলো ধরবে না, মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায় বলে সে কি নেত্য।
পরের দিন কেউ জানে না কী হবে? কেউ জানে না এবার বাজার হবে কোন টাকা দিয়ে, এটিএম আর ব্যাঙ্কে বিশৃঙ্খলার চূড়ান্ত, শুরুর সাত দিনে অর্থ দফতর থেকে অন্তত ১৮/১৯ টা আলাদা আলাদা নির্দেশিকা জারি করা হল, কত টাকা ব্যাঙ্ক দেবে, এটিএমে কবার যাওয়া যাবে। মানুষ জেরবার, তারমধ্যে নতুন টাকা এল বটে, কিন্তু এটিএমের সাইজে মিলছে না, আরেক হ্যাপা। এসবের মধ্যেই গুজরাত থেকে খবর এল জাল নোটের, হ্যাঁ ২০ দিনের মাথায়, তারপর খবর এল কর্ণাটকের থেকে, প্রথম খবর জাল নোটের, দ্বিতীয় খবর ২০০০ টাকার নতুন নোটের, প্রচুর পরিমাণ নতুন নোট পাওয়া গেল, যে নোট তখনও বাজারে অমিল।

মাত্র ৩৫ দিনের মাথায় কাশ্মীরে উগ্রপন্থীদের হামলা, বোঝা গেল তাদের কার্যকলাপে ছেদ পড়েনি, ভক্তদের জয়ধ্বনী কিছুটা স্তিমিত, সেই সময়ে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি নতুন তত্ত্ব নিয়ে মাঠে, যিনি নিজেই কবুল করেছিলেন যে, এই সিদ্ধান্ত তাঁরও জানা ছিল না, তিনি এবার সাংবাদিকদের ডেকে এই ডিমনিটাইজেশনের ফলে ডিজিটাল মনি, ডিজিটাল ইন্ডিয়া, ইন্টারনেটে লেনদেনের বৃদ্ধি, এসব নিয়ে বোঝাতে শুরু করলেন, বুদ্ধিমান জেটলি বুঝে গিয়েছিলেন, ওসব কালাধন, উগ্রপন্থী ইত্যাদি বাওয়াল চলবে না। তিনি বরং একটা যুক্তিগ্রাহ্য বিষয় নিয়ে মাঠে নামলেন, বিজেপি অন্তত ডিমনিটাইজেশনের পক্ষে কিছু কথা বলা শুরু করল, না হলে কদিন তো মুখ দেখানোই ভার হয়ে গিয়েছিল, এদিকে দোকানে বিক্রি বাট্টা বন্ধ, ছোট কারখানা বন্ধ। সেই সময় মোদিজীর এক ভক্ত, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে টেকনিশিয়ান, তখন থেকেই টালিগঞ্জে নতুন বিজেপির ইউনিয়ন খোলার জন্য এক দালাল পরিচালকের দালালি করেন, তিনি বলেছিলেন, কী? কেমন লাগছে? ১৬০০ টাকা ক্যাশ দিয়ে গলদা চিংড়ি খাওয়া বন্ধ তো? এবার ক্যাশ টাকাগুলো ঘরে পচে পড়ে থাকবে।
ক’দিন পরে তার মুখ শুকনো, টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিতে মাস দুয়েক সব কাজ বন্ধ, তারও কাজ নেই। মাস চারেক পরে সেই ফড়ে বাবুরা কোঁচা দুলিয়ে বাজারে গিয়ে, তার চোখের সামনে, ৩২০০ টাকা ক্যাশ দিয়েই, দু’কেজি গলদা চিংড়ি কিনল, দুটো দু হাজারের নোট ধরিয়ে দিল, তার পর থেকে মোদিজীর নাম শুনলেই বেচারা ক্ষেপে যায়, সে তো আর সাতে পাঁচে দাদা নয়, সাধারণ মানুষ, মোদিজীর ওপর ভরসা করেছিল, ভেবেছিল, মোদিজী যখন করছেন, তখন নিশ্চই মানুষের ভালর জন্যই করছেন, নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝেছেন, আর যাই করুন, মোদিজী মানুষের ভালো করার জন্য ক্ষমতায় বসেননি।

আরও পড়ুন : চতুর্থ স্তম্ভ : ১০০ কোটির ঢপ

সেই ডিমনিটাইজেশনের পাঁচ বছরের বর্ষপূর্তি, পাঁচটা বছর পরেও তার প্রভাব আজকে দেশের অর্থনীতিতে স্পষ্ট, সেদিনের নির্বুদ্ধিতা, অশিক্ষিত প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাসুল, আজও দেশের মানুষকেই গুনতে হচ্ছে, মোদিজীকে নয়। আসুন সেই ডিমনিটাইজেশনের চেহারাটা, আজকের প্রেক্ষিতে আলোচনা করা যাক। মোদিজী বলেছিলেন, বহু টাকা গুদোমঘরে পড়ে আছে, তাদের হিসেব নেই, হিসেব বহির্ভুত এই কালো টাকা তো ব্যাঙ্কে জমা করা যাবে না, অতএব বিরাট এক কালো টাকা, কালাধন বাজোয়াপ্ত হবে। আদতে হয়েছেটা কী? ৪ নভেম্বরের হিসেব বলছে সেদিন বাজারে ১৭.৭৪ ট্রিলিয়ন টাকা ঘুরছিল, কারেন্সি ইন সার্কুলেশন। তারমধ্যে ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোটের হিসেব ধরলে ১৫.৪৪ ট্রিলিয়ন টাকা ছিল। মোদিজীর, মানে এন্টায়ার পলিটিকাল সায়েন্স পড়া প্রধান সেবকের কথা ধরলে, এই ১৫.৪৪ ট্রিলিয়ন টাকার এক বিরাট অংশই আর ব্যাঙ্কে ফেরত আসবে না, গুদোমে পচবে। হল কী?
২০১৬-১৭ দেশের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে ১৫.২৮ ট্রিলিয়ন টাকা ফেরত চলে এসেছে, বিভিন্ন দেশে জমা ৫০০ বা ১০০০ টাকার হিসেব এর মধ্যে ধরা নেই, তার মানে ৯৮.৯৬% টাকা ৩০ জুন ২০১৭ র মধ্যে ফিরে এসেছে, এরপরেও বিভিন্ন আদালতের রায়ে কিছু টাকা আগেই বাজেয়াপ্ত হয়েছিল, কিছু টাকা আদালতের কাছে গচ্ছিত আছে, কিছু টাকা কো অপারেটিভ সমিতির কাছে আছে, সেসবের হিসেব ধরলে ৯৯.৪% টাকা ফিরে এসেছে।

মোদিজী ডাহা মিথ্যে কথা বলেছিলেন বা কিছুই না জেনে এতবড় নির্বোধ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আজ তা প্রমাণিত। এবার আসুন দেখা যাক, বাজারে কতটাকা ক্যাশ ঘুরছে, মানে ক্যাস ইন সার্কুলেশন? মাত্র ১৬ মাস পরে বাজারে ১৮.১৭ ট্রিলিয়ন ক্যাশ টাকা ঘুরতে থাকল, আর আজ পাঁচ বছরের মাথায় ক্যাশ ইন সার্কুলেশন কত? ২৯ ট্রিলিয়ন টাকা, ডিমনিটাইজেশনের আগের চেয়ে ৬৫% বেশি, জোর সে বোলো, মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়! এদিকে জিডিপি কিন্তু সেই তখন মানে ২০১৬তে যা ছিল, তার চেয়ে ঢের কম, সে কথা তো সবার জানা, তাহলে মানি ইন সার্কুলেশনের এই বৃদ্ধি কি বলে? বলে যে সেদিন মোদিজীর সিদ্ধান্ত ছিল অযৌক্তিক, নিছক এক খামখেয়ালিপনা, যা আমাদের জাতীয় জীবন, জাতীয় অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করেছে।
মোদিজীর দ্বিতীয় লজিক, ডিমনিটাইজেশনের ফলে ফেক বা জাল নোটের রমরমা কমবে, এবং তার ফলে নাকি উগ্রপন্থা হ্রাস পাবে। সারা দেশে বিভিন্ন প্রান্তে, কাশ্মীর, উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলোতে ইন্সারজেন্সি এতটুকু কমে তো নিই বরং কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে, কাশ্মীর আর উত্তর পূর্ব রাজ্যে মিলিটারি বাজেট সেই কথাই প্রমাণ করবে, এই এলাকায় গ্রেপ্তারি, পুলিশি পাহারাদারি বৃদ্ধি পেয়েছে, পরিসংখ্যান তো তাই বলছে।
হ্যাঁ ফেক নোট বা জাল নোট কমেছে, অনেকটাই কমেছে, কিন্তু তা কমেছে আধুনিক প্রযুক্তির জন্য, ডিমনিটাইজেশনের জন্য নয়, নতুন যে টাকা ছাপানো হচ্ছে তার বিভিন্ন স্পেশিফিকেশন, তার বৈশিষ্টের জন্যই জাল নোট ছাপানো বন্ধ হয়েছে, এর সঙ্গে ডিমনিটাইজেশনের কোনও সম্পর্ক নেই। এখন বলা হচ্ছে, ডিজিটাইজেশনের কথা, ডিজিটাল ইকোনমির কথা, যা তখন অরুণ জেটলি বলেছিলেন, কিন্তু তার সঙ্গে ডিমনিটাইজেশনের সম্পর্কটা কোথায়? যে টাকা বাজারে ঘুরছিল, তা রেখেই ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা, পে টি এম, ফোন পে ইত্যাদি চালু করার অসুবিধে তো ছিল না, বলা হচ্ছে প্রচুর ফেক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ধরা পড়েছে, সেটা ধরতেও তো ডিমনিটাইজেশনের দরকার ছিল না।

আরও পড়ুন : চতুর্থ স্তম্ভ : যেদিন সুনীল জলধি হইতে আসিল আদানি ভারতবর্ষে

আসলে প্রযুক্তি একটা সময় ধরে আসে, এই ডিজিটাল ইকোনমি ইত্যাদি এমনিই চালু করা যেত, চালু হতও, মানুষের মাইনের টাকা ক্যাশে না দিয়ে ব্যাঙ্কে জমা পড়লে, কিছু টাকাতো ব্যাঙ্কে জমে, তো সেটা করার জন্য ডিমনিটাইজেশনের দরকার তো ছিল না, এটা আজ পরিস্কার। দাড়ি কামানোর জন্য কোদাল লাগে না, আর দাড়ি কামানোর জন্য কোদাল ব্যবহার করা হলে তা যে বিপদ ডেকে আনবে সেটাও সবার জানা, মোদিজী আর তার ভক্তরা অবশ্য এই সহজ সরল সত্যটা বোঝেন না, কিন্তু আমাদের মনে আছে, আমাদের প্রধান সেবক সেদিন গলার শির তুলে, নাটকীয় কান্না কেঁদে, মানুষকে বলেছিলেন ৫০ দিন সময় দিন, তারপর যে সাজা দেবেন, তাই মাথায় পেতে নেবো।

আজ পাঁচ বছর পরে তাঁকে সেই কথাটা মনে করিয়ে দেওয়াটা আমাদের দায়িত্ব, ৫০ দিন নয়, পাঁচ বছর কেটে গেছে, আপনার নির্বোধ সিদ্ধান্তে আমাদের দেশের অর্থনীতি এখনো বিপর্যস্ত, স্বীকার করুন, দায় নিন মিঃ প্রাইম মিনিস্টার।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Kaustuv Ray | বিচারকের প্রশ্নমালায় বিপাকে ইডি
00:00
Video thumbnail
Weather Update | গরম থেকে মুক্তি! দক্ষিণবঙ্গের জেলাতে দুপুর থেকে ঝড়বৃষ্টির সতর্কতা
00:00
Video thumbnail
Lok Sabha Elections 2024 | কলকাতা টিভির মুখোমুখি ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীরা, কী বললেন শুনুন
00:00
Video thumbnail
High Court | পাণ্ডবেশ্বরে যৌথ মঞ্চের মিছিলের অনুমতিতে 'না', মামলা দায়েরের অনুমতি হাইকোর্টের
00:00
Video thumbnail
Rekha Patra | ভোটের আগে বড় স্বস্তি রেখা পাত্রর, রক্ষাকবচ দিল কলকাতা হাইকোর্ট
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | শুভেন্দুর কোলাঘাটের ভাড়াবাড়িতে পুলিশের হানা, তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ বিরোধী দলনেতার
00:00
Video thumbnail
Lok Sabha Election 2024 | কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ শুভেন্দু-হিরণ, পুলিশি হানার প্রতিবাদে মামলা
00:00
Video thumbnail
Bangladesh MP | নিউটাউনে বাংলাদেশের সাংসদের রহস্যমৃত্যু
02:19
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | ভোট আবহে বিজেপির ঠিকানায় পুলিশি হানা, বিচার চেয়ে আদালতে শুভেন্দু-হিরণ
34:31
Video thumbnail
পায়ে পায়ে ধর্মযুদ্ধে | মিঠুনের মিছিল বাতিলে ক্ষমাপ্রার্থী সৌমিত্র
08:03