বাঙালি সম্পর্কে কথাটা বাঙালিদের মধ্যেই প্রচলিত হলেও খোঁজ নিয়ে দেখেছি কথাটা প্রত্যেক কমিউনিটিতে, প্রতেক ভাষাভাষীদের মধ্যেই প্রচলিত, ঐ কাঁকড়ার মত পা ধরে নামিয়ে দেওয়া। মানে ঝুড়িতে একটা কাঁকড়া থাকলে সে ঠিক বেরিয়ে যাবে কিন্তু ১৫/২০ টা কাঁকড়া থাকলে একটাও বের হতে পারবে না কারণ একজন বার হতে গেলেই অন্যজন তার পা চেপে ধরবে। কাঁকড়া তো বুদ্ধি খাটিয়ে এই কাজ করে না, তার ইনস্টিংক্ট এই করে। কিন্তু মানুষ এই কাজটা বুদ্ধি খাটিয়ে করে। বহুকাল আগে দেখেছিলাম এক মানুষকে তিনি তখন উচ্চ প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে আসীন, তো সেই তিনি এবং তাঁর বন্ধু, আপাতত ধরুন ক বাবু আর খ বাবু একই পদে ছিলেন কিন্তু তাদের ওপরে একটাই পদ ছিল, তো দুজনের মধ্যে একজন কে বাদ যেতেই হবে এমন এক অবস্থায় ক বাবুকে সেই পদে পাঠানো হল, খ বাবু অফিসের সমস্ত লোকজনকে জড় করে ক বাবুকে অভিনন্দন জানানোর অনুষ্ঠান করলেন, তাতে মালিককেও ডাকা হল। তারই সামনে খ বাবু ক বাবুর সাহায্য ছাড়া যে মালিক এক পাও চলতে পারতেন না, মালিকের আজ যা শ্রীবৃদ্ধি সবটাই যে কেবল এবং কেবলমাত্র ক বাবুর জন্য তা ব্যখ্যা করলেন এবং কিছুদিন পরে ক বাবুর চাকরি গ্যালো, খ বাবু সেই পদে বসলেন। এ ঘটনা সর্বত্র ঘটে। রাজনৈতিক দলে তো অহরহ, কান পাতলা নেতা নেত্রীদের কানে কিছু দিলেই হল, কার যে মাথায় কখন কোপ পড়বে কেউ জানে না। এমন কোনও দল নেই যে এ জিনিস হয় না কিন্তু সবাই জানলেও প্রকাশ্যে এই ঠ্যাং টানার কেচ্ছা নিয়ে আলোচনা হয় না। এবার হল। তাই সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্তবাবুর ঠাং ধরে কে টান দিলো?
প্যাকেজ
বিজেপি নাকি বাংলায় ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়, কারণ তাঁদের চাণক্য, অমিত শাহ টার্গেট বেঁধে দিয়েছেন ৩৫ টা আসনের। মানে ৪২ টাতে ৩৫ টা আসন জিততে হবে। কাজেই জয় মা বলে ভাসা তরীরে। তো সেই মিটিং এ যেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ার যাবতীয় প্ল্যানিং নিয়ে আলোচনা চলছে, সেখানেই বসে রাজ্য সভাপতি নিজেই জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপিতে কেউ উঠতে গেলেই তার ঠ্যাং ধরে টানা হয়। একথা তিনি জানালেন দিল্লিতে থেকে আসা নেতাদের, হুজুর ঠাং ধরে টান দিলে ৩৫ কেন ৩ টে আসনও কি জুটবে, না ঠিক এটা বলেন নি কিন্তু ভাবখানা প্রায় এরকমই ছিল। অতএব মূল প্রশ্নে ফেরা যাক, ঠাং ধরে, মানে রাজ্য সভাপতির ঠ্যাং ধরে কে টানিতেছে। দলের সভাতে সুকান্তবাবু তো মিথ্যে কথা বলেন নি? প্রথমেই যে নামটা মনে আসতে পারতো সেটা অনুপম হাজরা, তো সেই ডঃ হাজরা তো আপাতত ঢাল নেই তলোয়াত্র নেই নিধিরাম সর্দার, তাঁর যাবতীয় পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে তিনি এখন হিমালয়ে যাচ্ছেন, যদিও মোদিজী সেখানে নেই। তাহলে দ্বিতীয় সম্ভাব্য নাম দিলীপ ঘোষ। হ্যাঁ এখনও পর্যন্ত এই এক দিলীপ ঘোষই বুক ঠুকে বলতে পারেন যে ওনার সময়ে দলের ভোট বেড়েছে, আসন এড়েছে, প্রাসঙ্গিকতা বেড়েছে, ওনার লড়কে লেঙ্গা পাকিস্তান গোছের তেবর কর্মী বাহিনীকে চাঙ্গা করেছিল। কিন্তু সেসব তো এখন ইতিহাস, রাজ্য দপ্তরে ওনার একটা স্থায়ী চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থাও কেড়ে নিয়েছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বাবু, তো তিনি কিভাবে সুকান্ত বাবুর ঠ্যাং ধরে টানবেন? আর টানলেই বা তাতে সুকান্ত বাবুর কী এসে যায়? তাহলে? তাহলে বাকি রইলেন শুভেন্দু অধিকারি যিনি রাজ্য বিজেপির দায়িত্ব না পেয়ে যাবতীয় কাজকর্ম বিরোধী দলনেতা হিসেবেই চালাচ্ছেন, তিনি খুব একটা দলের দপ্তরে আসেন না, এক সমান্তরাল শাসন ব্যবস্থা চালান ঐ বিধানসভা বা কাঁথির বাসভবন থেকে। তাহলে তিনিই ঠ্যাং টানছেন? এই সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না, কিন্তু সেটাই যদি সত্যি হয় তাহলে ক্রীয়ার বিপরিত প্রতিক্রিয়াও কি থাকবে না? মানে সুকান্তবাবুও কি হাতে দেশলাই কাঠি নেন নি? তিনিও কি ঐ অধিকারিবাবুর ঠ্যাং ধরে টানছেন না? সেতার সম্ভাবনা তো উড়িয়ে দেওয়া যাবে না? তাহলে এবার প্রশ্ন রাজ্য বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা যদি একে অন্যের ঠ্যাং ধরে টানেন, তাহলে ঐ টার্গেট ৩৫ এর কী হবে? সেটাই আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাষা করেছিলাম, রাজ্য বিজেপির নেতারা একে অন্যের ঠ্যাং ধরে টানাটানি করছেন, একথা স্বয়ং রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারই বলেছেন, সেক্ষেত্রে অমিত শাহের টার্গেট ৩৫ আসনের কী হবে? শুনুন মানুষজন ঠিক কী বলেছেন?
ভক্স পপ
আগে অনেকবার বলেছি আবার বলি বাংলার মাটিতে এই হিন্দুত্বের চাষবাস, বিশেষ করে বিজেপি আর এস এস মার্কা চাষবাস করা ভারি কঠিন। মধ্যপ্রদেশে, উত্তরপ্রদেশে, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থানে যা অনায়াসে করা যায়, ঐতিহাসিক কারণেই তা বাংলায়, পঞ্জাবে, দক্ষিণ ভারতে করা সম্ভব নয়, সেখানে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ধর্ম আর তার নেতারা হিন্দুত্বের অন্য সজ্ঞা তৈরি করেছেন। মানুষ ঐ উগ্র হিন্দুত্বে সায় দেবে না, যার ফলে ঐতিহাসিকভাবেই এখানে বিজেপি সেই জায়গাটা দখল করে উঠতে পারছে না, পারছেনা অথচ না পারার কারণও বুঝতে পারছে না, হতাশা বাড়ছে, সেই হতাশার বর্হিপ্রকাশ হল এই ঠ্যাং টানাটানির অভিযোগ। হাত আর গলা জড়াজড়ি করে চললেও আগামী লোকসভার নির্বাচনে এই বাংলাতে ৫/৬ টা আসন পাওয়াতেও প্রচুর ঘাম ঝরাতে হবে স্যর, আর তার পরে ঐ ঠ্যাং টানাটানি শুরু হবে, যদি অবশ্য ঠ্যাং থাকে।
রাজ্য সভাপতি সুকান্তবাবুর ঠাং ধরে কে দিলো টান?
Follow Us :