বলিউডে তাঁর হাতেখড়ি বন্ধু সেলিম খানের সঙ্গে মিলে চিত্রনাট্য লেখার কাজ দিয়ে। একদিকে যেমন অনবদ্য সব সিনেমার গল্প উপহার দিয়েছেন জাভেদ-সেলিম জুটি। তেমন আবার সফল চিত্রনাট্যেকারের পাশাপাশি কবি ও গীতিকার হিসেবেও বলিউডে সমান জনপ্রিয় জাভেদ আখতার। বারবার তাঁর গানের কথায় আপামোর বলিউড প্রেমীকে মুগ্ধ করেছেন জাভেদ আখতার।
কিংবদন্তি এই শিল্পীর জন্ম মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে ১৯ জানুয়ারি ১৯৪৫ সালে। বাবা নিসার আখতার ছিলেন খ্যাতনামা কবি আর মা সাফিয়া ছিলেন উর্দু সাহিত্যকার ও প্রোফেসর। তাঁর ডাকনাম ছিল জাদু। নিজের একটি কবিতার লাইন ‘লমহা লমহা কিসি জাদু কা ফসানা হোগা’ থেকে জাদু নামকরণ ছোট জাভেদ আখতার। তাঁর ছেলেকে ঠিকই চিনেছিলেন বাবা। সত্যিতো কথার জাদুগর তিনি প্রেম, বন্ধুত্ব, আবেগ সব কিছু এমন ভাবে তার লেখনিতে ফুটিয়ে তোলন জাভেদ সাহাব তা এক কথায় অতুলনীয়।
View this post on Instagram
(বাবার জন্মদিনে তাঁর ইনস্টাগ্রামে বিশেষ বার্তা ছেলে ফারহান আখতার)
১৯৯৯ সালে জাতীয় পুরস্কারে পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত করে তদানীন্তন ভারত সরকার। এর পাশাপাশি তাঁর হিন্দি চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অসামান্য সব কাজের জন্য পেয়েছেন পাঁচটি জাতীয় পুরস্কার।
আজ প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পীর ৭৮তম জন্মদিন উপলক্ষে রইল তাঁর লেখা এমন কিছু কালজয়ী গান যা বার বার শোনার পরও প্রত্যেক বারই যেন নতুন করে এক রোমাঞ্চ তৈরি করে।
জশন-এ-বাহারা (Jashn-e-bahara, Jodha Akbar )
আশুতোষ গোওয়ারিকারের পিরিয়ড রোমান্টিক ফিল্ম যোধা আকবারের প্রেম পর্দায় যেমন পারদর্শিতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছিলেন ঐশ্বর্য রায় ও হৃত্বিক রোশন তেমনি সেই প্রেমের মাধুর্য ও রোমাঞ্চ দর্শক মনের অতলে পৌঁছয় জশন-এ-বাহারা গানের কথায়। জাভেদ অখতারের অতুলনীয় লেখনি সঙ্গে এআর রেহমানের সুরের মায়া ও জাভেদ আলির আবেগ্রবণ গায়কি এই গানকে নিমেষে জনপ্রিয় করে তোলে। গানটি সেই বছরের হিট গানগুলির অন্যতম।
কল হো না হো (Kal ho na ho Title Track)
‘হর ঘড়ি বদল রহি হ্যায় রূপ জিন্দেগি, ছাও হ্যায় কভি কভি তো ধুপ জিন্দেগি’। কাল হো না হো টাইটেল ট্র্যাকের প্রথম লাইন। কী অদ্ভুত জীবনের ওঠানামা, চাওয়া পাওয়া যে এত সুন্দর করে কথার জাদুতে ফুটিয়ে তুলতে পারেন তিনি। হোক না বলিউডের সুপারহিট নাম্বার, জীবনমুখি গান বললেও খুব একটা ভুল বলা হবে না। অদ্ভুত এই গানের বুনুনি যেমন রয়েছে জীবনের ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলির উল্লেখ তেমনি রয়েছে মডার্ন এজেরর কবিদের জগতের জনপ্রিয় ক্যাচফ্রেজ কার্পে ডিয়াম। অর্থাত্ ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা ভুলে বর্তমানকে নিয়ে বাঁচা! সম্ভবত, গীতিকার হিসেবে জাভেদ আখতারের কেরিয়ারে অন্যতম সেরা এই গানটি। আজও সমান প্রাসঙ্গিক, সমান জনপ্রিয়। তাঁর কথায় সোনু নিগমের গলায় এই গান অনবদ্য।
সন্দেশে আতে হ্যায় (Sandese aate hain, Border )
সন্দেশে আতে হ্যায়. বর্ডারের এই কালজয়ী গানের জন্য জাতীয় পুরষ্কারের সম্মানিত করা হয় তাঁকে। বর্ডার ছবির এই গানে সেনা কর্মীদের ব্যক্তি জীবনের টানাপড়েনকে নিঁখুত ভাবে তাঁর গানের কথায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন জাভেদ আখতার। অনু মালিকের সুরে সোনু নিগমের গলার আবেগপ্রবণ কন্ঠ এই গান চোখে জল আনে আজও।
ইউহি চলাচল রাহি (Yun hi Chala chal rahi, Swades)
শাহরুখের স্বদেশ ছবির এই গান এখনও পর্যন্ত বেস্ট ট্র্যাভেল সংগুলির অন্যতম। সোলো ট্রিপে কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে মিলে বেড়াতে বেরিয়ে লং ড্রাইভের সময় প্লেলিস্টে এই গান যদি না থাকে। তা হলে ধরে নিতে হবে আপনি একেবারেই বলিউড প্রেমী নন।
দিল চাহতা হ্যায় (Title Track, Dil Chahta Hai )
রোজ অফিস আর বাড়ি। দৈনন্দিন জীবনের গথে বাঁধা ছন্দে ঘুরপাক খাচ্ছে জীবন। ক্লান্ত হয়ে গেছেন আপনি। ভীষণ মিস করছেন কলেজে, ইউনিভার্সিটিতে বন্ধুদের সঙ্গে হৈ হুল্লোড়ে কাটানো সময়। পুরনো বন্ধুদের কাছে না পেলে শুনে দেখুন গান দিল চাহতা হ্যায়, কভি না বিতে চমকিলে দিন। সত্যি এক লহমায় যেন মনে পড়ে যাবে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো দারুণ সব মুহূর্তে। পুরনো এই সব স্মৃতির ধুলো ঝেড়ে ফেলে চনমনে হয়ে উঠবে ক্লান্ত মন। এই প্রাণোচ্ছল এই গানটি লেখার সময় প্রথমবার ছেলে ফারহান আখতারের সঙ্গে কোলাবরেট করেছিলেন জাভেদ আখতার।