কলকাতা: ট্রেন দুর্ঘটনায় শত শত মৃত্যুর মুখেও প্রাণে বেঁচে ফিরলেন। মৃত্যুপুরী থেকে রক্ষা পেয়ে এখন শুধুই ঘরে ফেরার অপেক্ষা। এত দুঃখের মধ্যেও এটাই প্রাপ্তি। সন্দেশখালি থানার ১১ জন সরবেড়িয়া থেকে করমন্ডল এক্সপ্রেসে করে যাচ্ছিলেন কেরলে। কাজের উদ্দেশে যেতে গিয়ে রাস্তায় হঠাৎ দুর্ঘটনা। বিকট একটা আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে উঠে পড়েন। কারও হাতে লেগেছে, কারও পায়ে লেগেছে তো কারও মাথায়।
তবে আঘাত গুরুতর নয়। তবে বড় মনের আঘাতটা আরও বড়। চারিদিকে লাশের স্তূপ। এখনও যেন মনে হচ্ছে মৃত্যুদূতের পৈশাচিক উল্লাস ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে চারদিকে। যা দেখে মনের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। আর সেই আতঙ্ক থেকে তাঁরা আদৌ কোনওদিন বেরতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাওড়া স্টেশন থেকে তাঁদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে মাঝরাতেই তাঁদের বাড়ির উদ্দেশে আবার পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে ফিরতে পারছেন এই ভেবে সরবেড়িয়ার এই মানুষজন খুশি।
আরও পড়ুন: Daily Bengali Horoscopes | Ajker Rashifal | আজকের রাশিফল | ৪ জুন, ২০২৩
এই খুশির মধ্যেও রয়েছে চোখের জলের ছায়া। বালেশ্বরের একটি হাসপাতাল থেকে বহু মৃতদেহের মধ্যে থেকে নিজের দাদার নিথর দেহ নিয়ে পূর্বস্থলী নিমদহ পঞ্চায়েতের পণ্ডিতপাড়া এলাকায় বাড়ি ফিরলেন ভাই। কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা গ্রাম। পেটের দায়ে রাজমিস্ত্রির কাজে যাব বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বাপি পন্ডিত। শুক্রবার রাতের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। এরপর তার খোঁজ মিলছিল না। গতকাল পরিবারের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে, তাঁর মৃতদেহ দেখতে পায় একটি হাসপাতালে। এরপরে গতকাল গভীর রাতে বাড়িতে ফেরে মৃতদেহ। রবিবার সকালে তার বাড়িতে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। ঘটনায় গোটা গ্রাম শোকস্তব্ধ।
অন্যদিকে, বাসন্তীর নিহতদের দেহ নিয়ে আসা হয়েছে গ্রামে। বাসন্তীর ছড়ানেখালি গ্রামে নিয়ে আসা হলে কান্নার রোল ওঠে গোটা গ্রাম জুড়ে। এই গ্রামেরই ৫ তরতাজা যুবক দুর্ঘটনার বলি হয়েছেন। যার মধ্যে একই পরিবারের তিন সদস্য রয়েছেন। এদিন গোটা গ্রামের মানুষ তাঁদের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন। এখানে নিহতদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর তাঁদের ক্যানিংয়ের বৈতরণী শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে শেষকৃত্য সম্পন্নের জন্য।
একইভাবে রবিবার ভোররাতে দেহ এল মঙ্গলকোটের আরমান খায়ের। শুক্রবার সন্ধ্যায় করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে শেষবারের মতো বাড়িতে কথা বলেছিলেন আরমান। আরমানের বাড়ি মঙ্গলকোটের দেউলিয়া গ্রামে। শোকে ভেঙে পড়া পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে উপচে পড়েছে এলাকার মানুষের ভিড়। শুক্রবার করমন্ডলে চেপে কেরলে যাচ্ছিলেন শ্রমিকের কাজে। এর আগেও তিনি গিয়েছিলেন কেরল। ইদের সময় বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর আবার ভিন রাজ্যের পাড়ি দিচ্ছিলেন দুটো বেশি পয়সা উপার্জনের আশায়। শেষ পর্যন্ত নিয়তির কাছে হার মানতে হল আরমানকে।