আজ জলের মতো এটা পরিষ্কার যে ইডি-সিবিআইকে বিজেপি, মোদি–শাহ তাদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এসব দুর্নীতি ইত্যাদি তাদের লক্ষ্য নয়, ওসব হল অজুহাত। ২৫ জন বড় নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছে গত এক দেড় দু’ বছরে, তাদের ২৩ জনের যাবতীয় ইডি মামলা তুলে তাদের ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে এ রাজ্যের শুভেন্দু অধিকারী বা শোভন চ্যাটার্জি যেমন আছেন, তেমনই আছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা, অজিত পাওয়ার, ছগন ভুজবল, প্রফুল্ল প্যাটেল, গীতা কোড়া, নবীন জিন্দল, অশোক চহ্বনের মতো দলবদলুরা। মাত্র গতকাল আপ নেত্রী অতিশী জানিয়েছেন, তাঁদের জানানো হয়েছে হয় বিজেপি জয়েন করো, না হলে জেলে যেতে হবে। মহুয়া মৈত্র ঠিক সেই কথাই বললেন, তাঁকে জানানো হচ্ছে ওই একই কথাই, হয় সুড়সুড় করে বিজেপিতে চলে এসো, পদ পাবে, টিকিট পাবে, না হলে জেলে যেতে হবে। এই একই কথা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সর্বত্র, প্রত্যেক প্রতিবাদীর কণ্ঠরোধ করার জন্য একই কায়দাতে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, না শুনলে জেলে পুরে দেওয়া হচ্ছে, এক মামলায় জামিন পেলে অন্য আরেক মামলা নিয়ে হাজির হচ্ছে ইডি-সিবিআই। একই কায়দাতে আমাদের চ্যানেল সম্পাদককে জেলে পুরে রাখা হয়েছে। এবং গল্পের শুরু এক এফআইআর থেকে, ২ নভেম্বর ২০১৭-তে রাজস্থানের জয়পুরে এক এফআইআর দায়ের করা হয়।
মূলত টাকা তছরুপ, চিটিংবাজি, চিটফান্ডের মাধ্যমে মানুষের টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়া ইত্যাদি ধারায় অভিযোগের ভিত্তিতে ওই জয়পুর থেকেই গ্রেফতার করা হয় পিনকন স্পিরিটস লিমিটেড-এর মালিক মনোরঞ্জন রায়কে। এফআইআর ছিল আমাদের রাজ্যের খেজুরি থেকেও, তার বহু আগেই করা। ১৯ জানুয়ারি ২০১৭-তে দায়ের করা আর এক এফআইআর-এও একই অভিযোগ ছিল, সেটাও এই গ্রেফতারির সঙ্গে জোড়া হল।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ৩৫)
যথারীতি সার্চ হল, রেড হল বিভিন্ন দফতরে, বিভিন্ন ডকুমেন্টস সিজ করা হল, সেসবের ভিত্তিতে মামলা চলতে লাগল। ২০২০-তে ৩ অক্টোবর বিচারকেরা রায় দিলেন, আজীবন কারাবাসের রায় ঘোষণা হল। সে রায়ে কী বলেছিলেন বিচারকেরা, আসব সে কথায়। কিন্তু এতবড় এক মামলায় যেখানে অপরাধীর আজীবন কারাবাসের সাজা শোনানো হচ্ছে যা প্রায় তিন বছর ধরে চলল, সেই মামলাতে কোনও দলিল দস্তাবেজে কি একবারের জন্য কৌস্তুভ রায়ের নাম বা তাঁর অন্য কোনও কোম্পানির নাম এসেছে? না, আসেনি। কোনও এক চিলতে কাগজেও এরকম কোনও তথ্য নেই। সেসব দলিল দস্তাবেজ আদালত দেখেছে, বাদী, বিবাদী পক্ষের উকিলেরা সেসব দস্তাবেজ নিয়ে সওয়াল করেছেন। না, একবারও সেই দলিল দস্তাবেজের কোথাও না ছিল কৌস্তুভ রায়ের নাম, না তাঁর কোনও কোম্পানির নাম। হঠাৎ করে এতদিন পরে সেই চিটিংবাজের অভিযোগের ভিত্তিতে কৌস্তুভ রায়কে জেলে পোরা হল। খুব সোজা মেসেজ, চ্যানেলটাকে বিজেপি-আরএসএস-এর আখড়া বানিয়ে দাও, তারপর যা ইচ্ছে তাই করো। উনি রাজি হননি, জেলে গেছেন এবং জেল থেকেই আমাদের জানিয়েছেন একদিন সূর্যের ভোর তো হবেই, সেদিন সব অন্যায়ের পাই পয়সার হিসেবও নেওয়া হবে। হ্যাঁ, হম দেখেঙ্গে।
“হম দেখেঙ্গে
যব জুলম-সীতম কে কোহে গরা, রুই কি তরহ উড় যায়েঙ্গে,
সব তাজ উছালে যায়েঙ্গে, সব তখত গিরায়ে যায়েঙ্গে,
হম দেখেঙ্গে, হম দেখেঙ্গে।”
দেখুন ভিডিও: