Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: একলা চলো রে

চতুর্থ স্তম্ভ: একলা চলো রে

Follow Us :

যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।
একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো রে ॥
যদি কেউ কথা না কয়, ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়–
তবে পরান খুলে
ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে ॥
যদি সবাই ফিরে যায়, ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি গহন পথে যাবার কালে কেউ ফিরে না চায়—
তবে পথের কাঁটা
ও তুই রক্তমাখা চরণতলে একলা দলো রে ॥
যদি আলো না ধরে, ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি ঝড়-বাদলে আঁধার রাতে দুয়ার দেয় ঘরে–
তবে বজ্রানলে
আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা জ্বলো রে ॥

গিরিডিতে বসে রবি ঠাকুর এই গান লিখেছিলেন, ১৯০৫ এ সেপ্টেম্বার মাসে ভান্ডার পত্রিকায় ছাপা হল, সুর প্রচলিত এক ধাপকীর্তনের, হরিনামে জগৎ মাতালে, আমার, একলা নিতাইরে। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় এই গান মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়েছিল, অনেক অনেক পরে ১৯০৭ নাগাদ, রবি ঠাকুর এইচ বসু স্বদেশী রেকর্ড কোম্পানিতে এই গান রেকর্ড করেন৷ তখনও মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকায় গান লেখার ১০ বছর পর ১৯১৫তে তিনি দেশে ফিরলেন৷ কিন্তু কী আশ্চর্য, এ গানের প্রত্যেক লাইন যেন গান্ধিজীকে মনে করেই লেখা৷ মানুষটার ডাকে আসমুদ্রহিমাচল মানুষ রাস্তায় নেমেছে, তার ইশারায় জেলে গিয়েছে৷ কিন্তু সারাজীবন তিনি একলাই থেকে গিয়েছেন৷ শেষ জীবনে তো বটেই।

আজ স্বাধীনতা ৭৫ বছরে পা দিল, আজাদি কা জসন, উদযাপন চারিদিকে, এখনও তিনি একলা, এখনও তিনি উপেক্ষিত৷ কিন্তু ৭৮ বছরের বৃদ্ধ এখনও ততটাই প্রাসঙ্গিক, ততটাই ঋজু বক্তব্য নিয়ে অনেকের প্রেরণা, অনেকের এখনও মাথাব্যাথা। গোয়ালিয়র থেকে আনা ইটালিয়ান বেরেত্তা পিস্তল, নম্বর ৭১৯৭৯১ থেকে তিনটে বুলেট বিঁধেছিল গান্ধিজীর বুকে, মারা গিয়েছিলেন৷ কিন্তু এখনও তাঁর চিন্তা নিয়ে বড্ড বেশি রকমের প্রাসঙ্গিক, আরএসএস-বিজেপির আগ্রাসী ধর্মীয় ফাসীবাদ যত উগ্র চেহারা নেবে, গান্ধী তত বেশি করে প্রাসঙ্গিক হবেন৷ তবুও তিনি শেষ দিন পর্যন্ত বড্ড একলা, সব দিক থেকে। কস্তুরবা মারা গিয়েছেন, যার কাছে তিনি সব কথা বিনা দ্বিধায় বলে ফেলতে পারতেন৷ ওই আগা খান প্যালেসেই মারা গিয়েছেন মহাদেব দেশাই, তাঁর বন্ধু, সহচর। মদ্যপ হরিলাল, বড়ছেলের নামে টাকা তছরুপের অভিযোগ, গান্ধী ত্যাগ করেছেন তাঁকে, হরিলাল লিখেছে আপনি মানুষ নন, নিজের অসহায় সন্তানের পাশে দাঁড়ালেন না৷ উনি গান্ধী, উনি সততার পাঠ দেন, উনি দাঁড়াতে পারেন না।

রাজনৈতিক পরিসরে সশস্ত্র বিপ্লবীদের কাছে, আপোষকামী, প্রশ্ন উঠেছে ভগত সিংহের ফাঁসি কেন আটকাতে পারলেন না৷ তাঁর ক্ষমতাকে বিশাল মনে করেছিল দেশের মানুষ, গান্ধিজী বললেই ফাঁসি রদ হয়ে যাবে৷ গান্ধিজী বলেছিলেন, আমি ওদের কাজকে সমর্থন করি না৷ কিন্তু মানবতার খাতিরে ওদের ফাঁসি দিও না৷ ইংরেজরা শোনেনি৷ ভারতীয়দের বড় অংশ কেবল প্রথমটা শুনেছে, তিনি হিংসা বিরোধী। হ্যাঁ অহিংস রাজনীতির কথা তাঁর মুখে তো নতুন কিছু নয়, কিন্তু প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে, কেন তিনি ফাঁসি আটকালেন না? তিনি ইংরেজ ভারত ছাড়োর ডাক দিচ্ছেন, কংগ্রেস নেতারা দ্বিধাগ্রস্ত, সমাজতন্ত্রী নেহরু ফাসিস্ট বিপদকে আটকাতে বড় ঐক্য দরকার বলে মনে করেন৷ দলের অনেকেই যুদ্ধ চলাকালীন ওই মাপের আন্দোলনে নামতে দ্বিধাগ্রস্ত, গান্ধিজী বলছেন, যুদ্ধে নৈতিক সমর্থন মিত্র শক্তির দিকেই৷ কিন্তু স্বাধীনতার জন্য অপেক্ষা নয়, হিন্দু মহাসভা আরএসএস কেবল কংগ্রেসের বিরোধিতা নয়, ব্রিটিশদের সমর্থনে কাজ করতে শুরু করল৷ সোভিয়েত আক্রান্ত এখন এটা জনযুদ্ধ, এই তত্ত্ব নিয়ে ব্রিটিশ ফৌজে যোগ দিতে থাকল কমিউনিস্টরা৷ ভারত ছাড়ো অন্দোলন শুরুর আগের দিনেই গ্রেফতার হলেন গান্ধী, কস্তুরবা, তাঁদের জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ সেদিনও নিস্তরঙ্গ ভারতবর্ষ৷ একলা গান্ধী৷

কিন্তু রাস্তায় গান্ধী, স্বরাজ চাই৷ পূর্ণ স্বরাজ চাই৷ ইংরেজ ভারত ছাড়ো। দ্বিতীয় দিনে জেগে উঠল ভারতবর্ষ, গান্ধী সমেত নেতাদের গ্রেফতারিই জাগালো ভারতকে৷ উত্তাল হল এই বাংলা, মেদিনীপুর স্বাধীন হল। যুদ্ধ শেষ, স্বাধীনতা আসবে, মহম্মদ আলি জিন্নাহ পাকিস্তানের কথা বলছেন৷ দ্বিজাতি তত্ত্বের কথা বলছেন ভিনায়ক দামোদরদাস সাভারকর৷ গান্ধিজী ঐক্যবদ্ধ দেশের কথা বলছেন৷ মাউন্টব্যাটেনকে বলছেন, আপনারা চলে যান, আমরা নিজেরা বুঝে নেব। প্যাটেল চাইছেন যে কোনও মূল্যে স্বাধীনতা, এই সুযোগ ছাড়া যায় না। নেহরু বিভ্রান্ত, একবার মাউন্টব্যাটেন একবার গান্ধিজী করে বেড়াচ্ছেন৷ নিজেকে বোঝাচ্ছেন, দেশের স্বাধীনতা পেতে হলে, দেশবিভাগকে মেনে নিতেই হবে। গান্ধীজি বলেই ফেললেন, আমি একলা, আহা আজ যদি আমার আরেক সন্তান দেশে থাকত, তাহলে আমি নিশ্চিত সে রুখে দাঁড়াত৷ উনি নেতাজীর কথা বলছিলেন। শেষ পর্যন্ত র‍্যাডক্লিফ সাহেব এলেন, দেশ ভাগ করলেন, ম্যাপের ওপর পেনশিল দিয়ে দাগ টানা হল৷ সে দাগ স্কুলের মাঠকে স্কুল থেকে আলাদা করে দিল, নমাজের মসজিদ পড়ে রইল এক পারে, কাসেম মিয়াঁর ঘর আরেক দিকে৷ হারান মাঝি চেয়ে দেখল তার কালাচাঁদ, হরিচাঁদ থেকে গেল ওইপারে৷ সে একবস্ত্রে বৌ বাচ্চাকে নিয়ে এই পারে৷ এবং এই লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু, রিফিউজি দুষছে কাকে? গান্ধিজীকে। কারণ গান্ধিজী বলেছিলেন আমার দেহের ওপর দিয়ে দেশ বিভাজন হবে।

গান্ধিজী কথা রাখলেন না, কারা বলছেন? যে মুসলমানরা কাঁদতে কাঁদতে জায়নামাজের জমিন ছেড়ে, পাকিস্তানের দিকে রওনা দিলেন, তারা বলছেন। অন্যদিকে যারা তাদের এতদিনের ঘরবাড়ি, ব্যবসা ছেড়ে ভারতবর্ষে চলে আসতে বাধ্য হল, সেই পঞ্জাবি বা বাঙালি উদ্বাস্তু ও বলছেন, গান্ধিজী বিশ্বাসঘাতকতা করলেন৷ গান্ধিজী এখানেও একলা। কমিউনিস্টরা বললো ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়, এটা তো গান্ধীর ষড়যন্ত্রে ট্রানস্ফার অফ পাওয়ার, স্বাধীনতা কোথায়? এখানেও গান্ধীজি একলা। হিন্দু মহাসভা, আরএসএস লোকজন বলছে গান্ধী পাকিস্তানপন্থী৷ পাকিস্তানের হয়ে দালালি করছেন৷ স্বাধীনতার ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে যাবে কেন? এটা হিন্দুরাষ্ট্র, মুসলমানদের জায়গা নেই, পাকিস্তান শত্রুরাষ্ট্র, আবার গান্ধীজি একলা। এই অবস্থাতেও ধৈর্য হারাননি৷ একলাই চলে যাচ্ছেন নোয়াখালি, দাঙ্গা থামাতে, চলে যাচ্ছেন কলকাতা, অনশনে বসছেন, দাঙ্গা বন্ধ করো।

দেশ স্বাধীন, মধ্যরাতে পতাকা উত্তোলন, সেন্ট্রাল হলে নেহরুর ভাষণ, ট্রিস্ট উইথ ডেসটিনি, তার আগেরদিন পাকিস্তানে চাঁদতারা পতাকা উঠেছে, তুলেছেন কায়েদে আজম জিন্নাহ, ইকবাল তাঁর গানের কলি বদলে লিখেছেন, মুসলিম হ্যায় হম, বতন হ্যায় পাকিস্তান হমারা। গান্ধীজি একলা চরকা কাটছেন। বলেছেন, আমাকে অনুষ্ঠান আড়ম্বর থেকে বাদ দাও, সচিব পেয়ারেলালকে ডিক্টেশন দিচ্ছেন, কংগ্রেসের কাজ শেষ, কংগ্রেসের লড়াই ছিল স্বাধীনতার৷ স্বাধীনতা এসেছে, এবার স্বাধীন ভারতবর্ষে নতুন সংগঠন চাই, নতুন ভারত গড়ে উঠুক, ট্রাস্টির মত, অছির মত মানুষজন দায়িত্ব নিক দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষদের৷ কে শুনছে? তিনি বলে যাচ্ছেন, লিখে যাচ্ছেন। স্বাধীনতার শর্ত অনুযায়ী, সংযুক্ত ভারতবর্ষের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ৫৫ কোটি টাকা পাওনা পাকিস্তানের৷ এদিকে পাকিস্তান আক্রমণ করেছে কাশ্মীর, নেহরু মন্ত্রিসভা আটকে দিয়েছে সেই টাকা৷ মাউন্টব্যাটেন হাজির গান্ধীর কাছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুখ পুড়বে, আপনি কিছু করুন। গান্ধীজি প্যাটেল নেহরুকেই বললেন না, সংবাদমাধ্যমকেও জানিয়ে দিলেন৷ এ টাকা পাকিস্তানের প্রাপ্য৷ এর সঙ্গে যুদ্ধের সম্পর্ক নেই। জিন্না বললেন এসব বাণীতে ভুলছি না৷ প্যাটেল বিরক্ত, নেহরু বিব্রত, গান্ধীজি একলা। ওদিকে সেই কবেই, ৪৭ এর আগস্ট মাসেই একই প্লেনে পাশাপাশি বসে দিল্লি এসেছেন তিনজন, বিনায়ক দামোদরদাস সাভারকার, নাথুরাম ভিনায়ক গডসে, নারায়ণ দত্রাত্রেয় আপ্তে। কয়েকমাস পরেই ৪৮ এর ১৮ জানুয়ারি, আবার অনশন ভাঙলেন গান্ধীজি৷ দিল্লির মসজিদ, মুসলমান বাড়ি ঘরদোর দখল করেছিল হিন্দু, শিখ উদ্বাস্তুরা৷ তিনি বলেছিলেন দাঙ্গা থামাতে হবে, জবরদখল ছাড়তে হবে৷ বিরক্ত প্যাটেল, বিরক্ত নেহরু৷ আবার গান্ধীর অনশন, সব্বাই মিলে সই করে লিখে দিলেন, আর দাঙ্গা হবে না, দাঙ্গা থামলো৷ জবর দখলকারীরা সরে গেল৷

হিন্দু শিখ উদ্বাস্তুরা বিড়লা হাউসের সামনে এসে স্লোগান দিক গান্ধী তুমি বরং মরো, আমাদের আমাদের মত থাকতে দাও, গান্ধী আবার একলা। জানালেন ২ ফেব্রুয়ারির পরে পাকিস্তান যাব৷ আবার প্যাটেল আর নেহরুর মাথায় হাত৷ এই সময়ে গান্ধীজি করাচী যাবেন? ওদিকে গান্ধী হত্যার ষড়যন্ত্র শেষ৷ একটা চেষ্টা হল ২০ জানুয়ারি৷ ধরা পড়ল, মদনলাল পাহওয়া, অনেক কিছুই বললো, যা বললো তা দিয়ে সাভারকার, নাথুরাম গডসে, গোপাল গডসে, নারায়ণ আপ্তে, দিগম্বর বাগড়ে, বিষ্ণু রামচন্দ্র কারকারে, শঙ্কর কিস্তিয়া সবকটাকেই গ্রেফতার করাই যায়৷ কেন জানা নেই, তদন্তই হল না। গডসে, আপ্তে আবার সাভারকারের বাড়িতে গেল৷ তার নির্দেশে সেখান থেকে গোয়ালিয়র, সেখান থেকে গোয়ালিয়রে দত্রাত্রেয় সদাশিব পরচুরের বাড়িতে, যোগাড় হল ইতালিয়ান বেরেত্তা পিস্তল, গডসে আর আপ্তে চলে এল দিল্লি। নিউ এজ, কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকায় লেখা হল গান্ধীকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে, পুলিশ, আইবির একজনও জানার চেষ্টাই করল না, কারা ষড়যন্ত্র করছে৷ গান্ধীজি তখনও একলাই শেষ চেষ্টা করছেন৷ দেশ বিভাজন হয়েছে হোক, তিক্ততা মিটে যাক, হিন্দু মুসলমান ঐক্য ফিরে আসুক৷ তারপর দেখা যাবে। একলাই বলে যাচ্ছেন, একলা চলো রে। ৩০ তারিখ নাথুরাম গডসে খুন করল৷ তিনটে গুলি বুকে নিয়ে তখনও একলাই মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Sandeshkhali | অর্চনা মজুমদার ও রেখা পাত্রর নেতৃত্বে সন্দেশখালি থানার সামনে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ
07:53
Video thumbnail
Narendra Modi | ফের মোদির মুখে সন্দেশখালি- শাহজাহান
07:28
Video thumbnail
ECO India | নারীদের নানামুখী অভিজ্ঞতার কথা দেখুন ভিডিওতে
26:01
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধের দামামা | জেলিয়াখালিতে 'দুষ্কৃতীরাজ', প্রকাশ্যে সন্দেশখালির দ্বিতীয় ভিডিয়ো
03:09
Video thumbnail
Election 2024 | সোমবার চতুর্থ দফার ৯৬ আসনে ভোট, হেভিওয়েট প্রার্থী তালিকায় কারা? দেখে নিন ভিডিওতে
01:24
Video thumbnail
Mamata Banerjee | ‘রাজ্যপালকে না সরিয়ে, সন্দেশখালি নিয়ে মিথ্যাচার’‌, মমতার তোপের মুখে মোদি
05:52
Video thumbnail
Narendra Modi | সন্দেশখালিতে নতুন খেলা শুরু করেছে TMC, ভাইরাল ভিডিয়োর দিকেই কি ইঙ্গিত?
07:29
Video thumbnail
Narendra Modi | 'তৃণমূল ও বিরোধীরা গরিব মানুষের লুটতে ব্যস্ত', চুঁচুড়া থেকে আক্রমন মোদির
29:02
Video thumbnail
Amdanga | 'সন্দেশখালি নিয়ে কোন মুখে কথা বলছেন মোদি ?'আমডাঙা থেকে কটাক্ষ মমতার
10:56
Video thumbnail
Top News | বাংলাকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছে তৃণমূল’, বিরোধীদের আক্রমণ মোদির
40:16