Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeআজকেAajke | বর্ধমান রেল স্টেশনে যান, সেলফি তুলুন

Aajke | বর্ধমান রেল স্টেশনে যান, সেলফি তুলুন

Follow Us :

আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর এক পঞ্চম ইন্দ্রিয় আছে এবং সেটা দারুণ সক্রিয়। যা দিয়ে তিনি ক্যামেরার অবস্থান বুঝে ফেলেন, দক্ষ অভিনেতার মতোই ক্যামেরাকে খুঁজে নিয়ে নিজের উপস্থিতি জাহির করে তুলতে তাঁর জুড়ি নেই। এ ঘটনা আমরা বার বার উপলব্ধি করেছি, কে বলবে সামনে কমবেশি ৫০-৬০টা ক্যামেরা, সিকিউরিটি গার্ড, সাংবাদিকের দল দাঁড়িয়ে আছে। হ্যাঁ, ওঁর সেই গুহাতে ধ্যান করছেন ছবিটা দেখুন, বোঝার উপায় নেই, দেশে বিদেশে ক্যামেরা ডিটেকশন এবং তাকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এক অকল্পনীয় উচ্চতায় তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন। তাঁর দেখাদেখি তাঁর ভক্তরা এবং কী আশ্চর্য, সাধারণ মানুষও ক্রমশ ক্যামেরা সচেতন হয়ে উঠছেন। আর এমনিতেই আন্থ্রোপলজিক্যাল বিশ্লেষণে আপাতত এটা সেলফি যুগ, নিজের ছবি নিজে তুলে আত্মরতিতে মগ্ন হয়ে থাকার যুগ চলছে। আমি এসেছি লাদাখে, একটা নয় তিন চারটে উচ্ছ্বল হাসিমাখা মুখ, সে ছবি বরানগরে রতনবাবুর ঘাটে বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে তুললেও ততটাই বোঝা যেত, মানে সেখানে ওই মুখগুলো ছাড়া আর কিছু তো নেই। এমন ছবি আমি বহুবার দেখি স্টেশনে, বন্দে ভারত ট্রেনের সামনে, গাইজ, ট্রাভেলিং অন বন্দে ভারত, বুলেট ট্রেন, পিছনে ট্রেনের ছবি সামনে সহাস্য মুখ বা মুখেরা। এটা বেশ ভেবেচিন্তেই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে কারণে আজ পর্যন্ত যতগুলো বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু হয়েছে প্রত্যেকটার উদ্বোধনে নরেন্দ্র মোদি নিজে থেকেছেন। ইঞ্জিন খানিক ছুঁচলো, বুলেট আকারের, নতুন শেপ, কাজেই এক বদলে যাওয়া রেল ব্যবস্থার সঙ্গে ওঁর জড়িয়ে থাকা আর তার সঙ্গে প্রথম বুলেট ট্রেনে চড়েছি বলে অসংখ্য মানুষের আমোদ। বেশ করেছেন সেলফি তুলেছেন, কিন্তু সেই ব্যবস্থার তলায় চাপা পড়ে তিনজন মারা গেলেন, বহু মানুষ আহত, কোথায়? গত পাঁচ বছর ধরে ঘোষিত এক মডেল স্টেশন, বর্ধমানে। অনেক সেলফি তো তুলেছেন ভক্তকুল, এবার যান, ওই স্টেশনে গিয়ে অন্তত একটা সেলফি তুলে আসুন। সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, বর্ধমান রেল স্টেশনে যান, সেলফি তুলুন।

দেশে এখন অমৃতকাল চলছে, তো সেই অমৃতকালে অমৃত ভারত প্রকল্প এসেছে। বিমানবন্দরের মতো ঝাঁ চকচকে করে তোলা হবে দেশের কিছু স্টেশনকে। তাতে বসার জন্য আলাদা লাউঞ্জ থাকবে, খাবার দাবারের ব্যবস্থা থাকবে, দোকান থাকবে, সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে, সেই তালিকাতেই বর্ধমান স্টেশনের নাম এসেছিল। কাজ শুরু হয়েছিল, স্টেশন ভবনের সামনের মেরামতির পরেই ২০২০ সালে ৪ জানুয়ারি সেখানে ভেঙে পড়ল কাঠামো। একজন মারা গেলেন, কিছু লোকজন আহত হলেন। সেদিনও চোখ পড়েছিল ১৮৯০ সালে তৈরি এই স্টেশনের উপরেই বিরাট জলের ট্যাঙ্কের ওপর। সেটার মেরামত শুরু হল, শেষও হল, সেই ট্যাঙ্ক হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল গতকাল। গুরুতর আহতের সংখ্যা প্রায় ১৩, ভালোরকম আহত হয়েছে গোটা ২৪-২৫ জন আর মারা গেলেন তিন জন, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন: লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল আসন সমঝোতা হচ্ছে

কেবল এখানে নয়, গোটা রেল ব্যবস্থায় দুর্ঘটনার পর দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে, আজ এখানে তো কাল সেখানে, যখনই মারা যাচ্ছে তখনই একটা জাঁচ কমিটি, তদন্ত কমিটি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে, ব্যস, ওখানেই ইতি। বিভিন্ন তদন্ত কমিটির রিপোর্টের যে সুপারিশ এসেছে, তার ৭০ শতাংশের দিকে ফিরেও তাকাননি রেলের কর্তারা। এটাও আবার তাঁদেরই হিসেব বলছে। শূন্যপদ পড়ে রয়েছে লক্ষাধিক, তা ভর্তি করা হচ্ছে না বরং বহু কর্মী অবসর নেওয়ার ফলে আরও শূন্যপদ বাড়ছে। এক উপর-ভারি কাঠামো তৈরি হয়েছে যেখানে সবথেকে অবহেলিত যাত্রী সুরক্ষা, সেটাই আবার সামনে এল এই বর্ধমান রেল স্টেশন দুর্ঘটনায়। অথচ আমরা নতুন নতুন জামাকাপড় পরে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে মাঝেমধ্যেই দেখছি হরা ঝান্ডা দুলিয়ে বন্দে ভারত চালু করতে। সেও আরেক ঢপবাজি, ধরুন হাওড়া থেকে বোলপুরে যাবেন সকাল ৫.৫৫তে আছে বন্দে ভারত, সেখানে এসি চেয়ারকার আছে, নন এসি নেই, সময় লাগে এক ঘণ্টা তেতাল্লিশ মিনিট, ভাড়া ৬৫০ টাকা। আর সকাল ৬টা পাঁচে আছে গণদেবতা, সময় লাগে ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট, সেখানে নন এসি আছে, ভাড়া ৮৫ টাকা আর এসি চেয়ার কারের ভাড়া ৩০০ টাকা। মানে সাকুল্যে ৫০ মিনিট আগে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৩৫০ টাকা একস্ট্রা ফেয়ার। এটাকেই ঢপবাজি বলছি এবং এগুলো চালু করার সময়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী বলছেন আমজনতার জন্য রেল এখন আরামদায়ক হয়ে উঠছে। তার জন্য কত খরচ হবে? ৫০ মিনিট আগে আসার জন্য ৩৫০ টাকা, একজন দিন আনি দিন খাই মানুষের একদিনের মজুরি। উল্টোদিকে রোজ দুর্ঘটনা, রোজ মৃত্যুমিছিল। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, একদিকে রোজ দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে, মানুষ মারা যাচ্ছেন রেল দুর্ঘটনাগুলোতে, অন্যদিকে প্রচুর ভাড়া বাড়িয়ে নতুন নতুন বন্দে ভারত ট্রেন চালু করছেন, এ বিষয়ে আপনাদের মতামত কী? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।

ঘুরপথে রেল ব্যবস্থা যা আমআদমির যাতায়াতের ভরসা ছিল একদিকে তাকে মহার্ঘ করে তোলা হচ্ছে। স্পিড বাড়ছে না, নতুন লাইন পাতা হচ্ছে না, ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে কিন্তু সুরক্ষার দিকে নজর নেই। একই অবস্থা স্টেশনগুলোতেও, সেখানেও অব্যবস্থার চূড়ান্ত, সেটাই আরেকবার প্রমাণ হল গতকাল বর্ধমান স্টেশনের দুর্ঘটনায়।

RELATED ARTICLES

Most Popular