হাওড়া: আমতার রসপুরের রায় বাড়ির দুর্গা পুজো এই বছরে ৪৭৮ বছরে পদার্পণ করলো। রায় পরিবারের পুজো ঘিরে নানা গল্প।১৫৪০ সালে শের শাহের আমলে বর্ধমান থেকে রাজকর্মী হিসাবে রসপুরে আসেন যশোশচন্দ্র রায়। ১৫৪৫ সালে তিনি এই দুর্গাপুজো শুরু করেন। সেই থেকেই চলে আসছে এই পুজো। আগে একান্নবর্তী রায় পরিবার এই পুজো করলেও, এখন পরিবার ভেঙে যাওয়ার ফলে, সাতটি পরিবার মিলে এই চালিয়ে যাচ্ছে এই পুজো। তাই সাত ঘরের পুজো নামেই এখন পরিচিত।বর্তমানে কর্মসুত্রে পরিবারের অধিকাংশ সদস্য বাইরে থাকার কারনে পুজোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এলাকার মানুষ।যদিও পুজোর সমস্ত খরচ বহন করে এই সাতটি পরিবার।
জনস্রুতী অনুযায়ী পূর্বে বর্ধমান রাজাবাড়ির কামান দাগার আওয়াজ রিলে সিস্টেমে রসপুরে আসার পরেই শুরু হতো পুজো।এখন সে সব ইতিহাস।এখানকার মায়ের মূর্তির একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অন্যান্য জায়গায় এক মেড়ের মূর্তিতে মায়ের পাশে উপরে থাকে লক্ষী সরস্বতী ও নিচে থাকে কার্তিক গনেশ। এখানে ঠিক তার উল্টো। উপরে রয়েছে কার্তিক গনেশ ও নিচে রয়েছে লক্ষী সরস্বতী। পুরোহিতের মতে, পাশের গড়চন্ডী মন্দিরের মায়ের মূর্তির সাথে সাদৃশ্য রেখেই এখানে কার্তিক গনেশ থাকে উপরে।তাঁর দাবি, সন্ধি পুজোর সময় মায়ের মুখ থেকে ঘাম বেরোতে দেখা যায় অর্থাৎ মা জাগ্রত হন।তিনি জানিয়েছেন, এখানে বহু বছর আগে মোষ বলি হতো কিন্তু রায় বংশের তৃতীয় পুরুষ রামকৃষ্ণ রায় বৈষ্ণব ধর্মে দিক্ষিত হওয়ার পর থেকে এখানে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। তাই উঠে গিয়েছে সমস্ত রকম বলি। পরিবর্তে মাকে দেওয়া হয় বেল পাতার মালা।
আরও পড়ুন: ১৩ দিনের বোধন আজও বহাল সাবর্ণদের বাড়িতে
পাশাপাশি যেহেতু পাশের দামোদর নদে নৌকার মাধ্যমে বানিজ্য চালাত রায় পরিবার, সেহেতু মায়ের কাছে নিবেদন করা হয় বাঁশের তৈরি নৌকা। নবমীর দিন রাতে সেই নৌকা নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। এটিকে সৌভাগ্যের প্রতিক হিসাবে মানা হয়। পাশাপাশি আগে নৌকায় করে মাকে দামোদরে ঘুরিয়ে মাঝ নদীতে হতো মায়ের বিসর্জন।
বর্তমানে লোকের অভাবে সেই প্রথাও বন্ধ হয়ে গেছে।সময় পেরিয়েছে। কমেছে জৌলুস। তবে পুজোর রীতি এখনও চলে আসছে। রায় পরিবারের পুজোয় রয়েছে রাজারাজড়ার কথা। পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে বর্ধমানের রাজ আমলের ইতিহাস।গ্রামের মানুষ পুজোর কয়েকদিন এখানেই ভিড় জমান। রসপুরের পুজোয় তাই প্রাণের ছোঁয়া।
দেখুন আরও খবর: