জয়জ্যোতি ঘোষ, আমেদাবাদ: বিশ্বকাপ ফাইনালের পরের আমেদাবাদকে দেখলে চেনা দায়! কে বলবে দু’দিন আগেও গোটা ভারতবর্ষ যেন এসে মিশেছিল এই আমেদাবাদেই। আগাম সেলিব্রেশনের কত আয়োজন! অথচ এখন শহরের শপিং মল, রেস্তোরাঁ, মাল্টিপ্লেক্স, রিভার পয়েন্ট যেখানেই যান না কেন নিশ্চিত ভাবে অনুভব করবেন শ্মশানের নিস্তব্ধতা!প্রিয়জনের বিদায়ে আসে এধরণের নিস্তব্ধতা। এখানে এসেছে প্রিয় দলের বিশ্বজয়ের অধরা স্বপ্নের কারণে। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে যেখানে ১৯ নভেম্বর আবেগের বিস্ফোরণ হতে দেখা গিয়েছিল পরের দিন সেটিই হয়ে উঠেছে ১৪০ কোটি আবেগের সমাধিস্থল। ফাইনালের দিন খুব কাছে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের কথা শুনতেও যেখানে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছিল, পরের দিন সেখানে দাঁড়িয়েই শোনা যাচ্ছে দূর হতে কোনও পাখির কুজন।
ভারত যদি সেমিফাইনালে হেরে যেত মনে হয়ে না এতটা কষ্ট হত। শুধু আমেদাবাদ কেন? দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারত পৌঁছাতেই উৎসবের আয়োজন শুরু হয় ভারতের প্রতিটি অলিতে-গলিতে। অনেকেই মনে করছিলেন ভারতে আসল দিওয়ালি পালিত হবে ১৯ নভেম্বর রাত দশটার পর থেকে। কিন্তু একটা খারাপ দিন সব শেষ করে দিল। রোহিত শর্মা যেন সদ্য যুদ্ধ হেরে সাম্রাজ্য হারানো রাজা! বিচ্ছিন্ন দ্বীপে একাকি তিনি। এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসেই তো স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে যুদ্ধ জয়ের। স্বপ্ন দেখতে হবে হৃত সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের!
২১ নভেম্বর হোটেল থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার পথে চোখে পড়ল সেই ইলেকট্রনিক বিলবোর্ডগুলি যেখানে কয়েক ঘন্টা আগেও আলো করে ছিলেন রোহিত-বিরাটরা। রাতারাতি এখন সব ভ্যানিশ! একেবারে যেন ম্যাজিক। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে যেন রোহিতদের পৃথিবী পুরো বদলে গিয়েছে।
অন্যদিকে, ভাবতে খারাপ লাগে প্যাট কমিন্সরা এখন অন্য পৃথিবীর বাসিন্দা। যেখানে তাঁর দলের ক্রিকেটার বিশ্বকাপ ট্রফির উপর পা রেখে বিশ্বজয়ের উগ্র মেজাজিয়ানা দেখাতে পারেন! রোহিত-বিরাটদের মনে তখন বিশ্বকাপ ট্রফির এত কাছে গিয়েও সেটা স্পর্শ করতে না পারার চাপা বেদনা। স্বভাবতই এই মুহূর্তে দুই দল- দুই পৃথিবী।
ট্যাক্সি ড্রাইভার এয়ারপোর্টের দিকে যেতে যেতে বললেন, “আমার ছেলে টিফিনের খরচা বাঁচিয়ে বাজি কিনেছিল। ছোট থেকেই ক্রিকেট খুব ভালোবাসে। সেই বাজিগুলো পরেই আছে। পুরো বিশ্বকাপে ভারত এত ভালো খেলেও শেষটা কী হয়ে গেল।”
টিম হোটেলে খবর নিয়ে জানা গেল ম্যাচের দিন রাতে সেলিব্রেশনের সব আয়োজন তৈরি ছিল। কিন্তু ম্যাচ শেষে সব আয়োজনই বৃথা। এখানেই শেষ নয়, দুজন ভারতীয় ক্রিকেটার হোটেলে ফিরে ডিনার করেননি।
দিওয়ালি তো দূর অস্ত! সবরমতীর ধার দিয়ে মোতেরা ছাড়িয়ে আঁধার যেন গ্রাস করেছে গোটা আমেদাবাদকে। ভুল বললাম গোটা ভারতবর্ষকে- ভারতের প্রতিটি ফ্যানসের হৃদয়কে।
দু’দিন পরেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে নামবে ভারত। সেই সিরিজে যদি ভারত অস্ট্রেলিয়াকে ক্লিন সুইপও করে তাহলেও কি বিশ্বকাপ ফাইনালের হারকে ভোলানো সম্ভব? মনে হয় না ভোলানো সম্ভব। তাই আইসিসি টুর্নামেন্ট জিতেই এই হারের ক্ষতে প্রলেপ দিতে হবে। ২০২৪-এ রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ব্লু-জার্সিধারীদের বিশ্বজয়ের শপথ হোক আজ থেকেই- এখন থেকেই। হোক না সেটা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেই…..